বিশেষ প্রতিনিদি :
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন হাজিরপাড়া ইউপির চরচামিতা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা কালুমিয়ার সন্তানদের জমিজবর দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী সামছুল হুদা ও জয়নালের আবেদীনের বিরুদ্ধে।
মুক্তিযোদ্ধা কালুমিয়ার কন্যা আয়েশা বেগম জানান, ১৯৫৩ সালে আব্দুল হামিদ মিয়া হতে ৪২ শতাংশ জমি খরিদ করেন মৃত টুকামিয়ার ছেলে জয়নাল আবেদীন। জয়নাল আবেদীনের মৃত্যুর পর ওই ভূমির মালিক হন তার জের ওয়ারিশ মরিয়ম বেগম ও আনঞ্জুমানারা বেগম। আনঞ্জুমানারার স্বামী প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা কালুমিয়া। কালুমিয়ার চার কন্যা সন্তান রয়েছে।
জানা যায়, মরিয়ম বেগম হতে বিগত ১৯৭৬ইং ও ২০০৫ইং সনে আব্দুল মন্নান, আব্দুল হান্নান, আব্দুল রায়হান দুই দলিলে ২১ শতাংশ ভূমি খরিদ করেন। ২১ শতাংশ জমি খরিদ করে ৪২ শতাংশ জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেন সামছুল হুদা গং। ওই ভূমি বিরোধ নিয়ে হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে আনঞ্জুমানারা বেগমের ওয়ারিশ কন্যা আয়েশা বেগম বাদি হয়ে গত ২৫ এপ্রিল ২০১৯ইং তারিখে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আলম বাবুল অভিযোগটি গ্রহণ করে দুইপক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে একটি শালিস বৈঠক করেন। বৈঠকে উভয়পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে শালিসদারগণ একটি রায় প্রদান করেন। ওই রায়ে বিবাদিগণকে উক্ত ভূমিতে জবরদখল না করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়। আদেশ অমান্য করলে বাদিপক্ষকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজমীর হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিরোধীয় ভূমির মালিকানা দাবি নিস্পত্তি করতে একটি শালিস বৈঠকে বসেন। শালিসী বৈঠকে উভয়পক্ষের ৩জন করে ৬জন শালিসদার নিয়োগ করে নিয়োগ করা হয়। ওই শালিসদারগণ ইউপি সদস্য আজমীর হোসেনকে প্রধান করে ভূমি পরিমাপের জন্য দুইপক্ষের দুইজন সার্ভেয়ার দিয়ে জায়গা পরিমাপ করা হয়। পরিমাপে মৃত আব্দুল মন্নানের ওয়ারিশ মুরাদকে ২১ শতাংশ ও বাদিপক্ষ আয়েশা গংকে রাস্তাসহ ২১ শতাংশ জমি বুঝিয়ে দিয়ে চিটা করে বিরোধ নিস্পত্তি করা দেন।
উক্ত ভূমি বুঝে পাওয়ার পর আয়েশা বেগম বাউন্ডারী পিলার দিয়ে তারকাটা বেড়া দেন। বেড়া দেয়ার পর প্রতিপক্ষ মুরাদ ও বাবলুর নেতৃত্বে ১০/১২ জন মিলে সন্ত্রাসী কায়দায় ওই বাউন্ডারী বেড়া ও পিলার ভেঙে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আয়েশা বেগম বাদি হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পেয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানার এসআই শাহজালাল শিকদার সরেজমিনে গিয়ে উভয়পক্ষকে বিরোধীয় সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থা বজায় রেখে থানায় এসে বিরোধ নিস্পত্তি করার জন্য নোটিশ প্রদান করেন।
এদিকে নোটিশ পাওয়ার পর ক্ষীপ্ত হয়ে মৃত হামিদ মিয়ার ছেলে জয়নাল আবেদীন, জয়নাল আবেদীনের মেয়ের জামাই কামাল উদ্দিন ও আব্দুল মন্নানের ছেলে মুরাদের নেতৃত্বে বাদির পুরনো বসতবাড়ির নির্মাণাধীন ঘর ভাঙ্চুর করে নিয়ে যায় বলে আয়েশা বেগম জানান।
আয়েশা বেগম আরো জানান, বিগত মাঠ খতিয়ানের সময় আমরা আনঞ্জুমানারা খাতুনের ওয়ারিশগণ এলাকার বাইরে থাকায় ভুলবশত ওই ৩১ শতাংশ ভূমির মধ্যে ৫ শতাংশ ভূমি বিবাদিগণের নামে রেকর্ডভূক্ত হয় এবং বাকী ২৬ শতাংশ ভূমি ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত হয়ে যায়।
সাবেক ১৭২নং হালে ১৫৬নং চরচামিতা মৌজায় সি, এস ২০৯নং খতিয়ানের রায়তি মালিক আব্দুল আজিজ মিয়া ওয়ারিশসূত্রে মালিক পুত্র আব্দুল হামিদ মিয়ার হতে বিগত ১১/০১/১৯৫৩ইং সনে ২৬৩নং ছাপ কবলা দলিলমূলে আব্দুল হামিদ মিয়া হতে ২০৯নং সিএস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত ১২৪৭ দাগে ৪২ শতাংশ ভূমি খরিদসূত্রে মালিক হন জয়নাল আবেদীন মিয়া, পিতা টুকা মিয়া। উক্ত ভূমি এস, এ ২১৮নং খতিয়ানেও রেকর্ড হয় জয়নাল আবেদীনের নামে।
জয়নাল আবেদীনের মৃত্যুর পর তার জের ওয়ারিশ মরিয়ম বেগম ও আনঞ্জুমানারা বেগম উক্ত ৪২ শতাংশ সম্পত্তির মালিক হন।
স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বার আজমীর হোসেন জানান, আমিসহ উভয়পক্ষের শালিসদারগণ ও সার্ভেয়ার মিলে পরিমাপ করে উভয়পক্ষকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আয়েশা বেগমের বুঝিয়ে দেওয়া সম্পত্তিতে নির্মিত বাউন্ডারী কাটাতারের বেড়া রাতের আঁধারে কে বা কারা ভেঙে নিয়ে যায়। পরে শুনেছি যে প্রতিপক্ষের লোকজন ওই বেড়া ভেঙে নিয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এই বিষয় উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও সুবিচারের কামনা করছেন।
Leave a Reply