বিশেষ প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে একটি হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেছে দু’পক্ষ। হত্যা মামলার বাদি পক্ষ এবং হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামী পক্ষ রবিবার দুপুরে পৃথক এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি হত্যা মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামী চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি তাজুল ইসলাম ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুর ভাগিনা শিমুলকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
১৫ এপ্রিল রাতে খুনিরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। পিবিআইর তদন্তে তাজুলের বিরুদ্ধে হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। গত ৪ নভেম্বর র্যাব তাকে গ্রেফতার করে পুলিশে সোপর্দ করে।
এ ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবর হয় তাজুল সমর্থকরা। অন্যদিকে শিমুল হত্যার ঘটনায় তাজুলের বিচার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সবর থাকে আরেক পক্ষ।
আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামীগ ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দু’ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একপক্ষ খুনীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, অন্যপক্ষ খুনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিচারের দাবি তুলেছে।
এর জের ধেরে রবিবার দু’পক্ষই মানববন্ধনের আয়োজন করে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিলো। তবে আওয়ামীলীগ একটি অংশ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মীরা খুনির পক্ষে অবস্থান নেওয়া তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে জনসাধারণের মাঝে।
সাড়ে ১১ টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আয়োজনে তাজুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিনের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইমতিয়াজ, চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এম আলাউদ্দিন, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম–আহবায়ক আবদুর রাজ্জাক রিংকু, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিনও চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক রিয়াজ হোসেন জয়সহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা তাজুলকে নির্দোষ দাবি করে এদিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন।
এদিকে, তাজুল ইসলামসহ হত্যা মামলার ৭ আসামির বিচারের দাবিতে দুপুর ১টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধন করেছে আরেক পক্ষ।
চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এম মাসুদ সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক মুনছুর আহম্মদ, চন্দ্রগঞ্জ থানা ১৪ দলীয় ঐক্য জোটের আহবায়ক সাবির আহমেদ, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী সোলাইমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান, কৃষকলীগের যুগ্ম- সম্পাদক মো. সেলিম, যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মোরশেদ আলম, শ্রমিক লীগের আহবায়ক মোঃ দুলাল, যুগ্ম আহবায়ক, মোঃ সেলিম, শ্রমিক লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
মামলার বাদী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু বলেন, ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল বাড়িতে ঢুকে আমার ভাগিনা শিমুলকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী তদন্ত করে ৭ জনের নামে প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে তাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার নাম ছিল। তাজুল ইসলাম বিএনপির সন্ত্রাসী জিসান বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলো। সে বিএনপির রাজনীতি করতো। সে একজন খুনী। কিন্তু তাকে স্বেচ্ছাসেবকলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি আমার ভাগিনার খুনীদের বিচার দাবি করছি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল বাড়িতে ঢুকে কাজী মামুনুর রশিদের ভাগিনা শিমুলকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায় ২১ এপ্রিল সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে ভাগিনা হত্যার মামলা দায়ের করে কাজী বাবলু। এরপর মামলাটি তদন্ত পড়ে লক্ষ্মীপুর ডিবি পুলিশের কাছে। ডিবি তদন্তকারী কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতে। কিন্তু বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালীকে তদন্ত ভার দেন। পিবিআই ওই মামলার তদন্ত শেষে ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনের আলোকে ৪ নম্বর আসামি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম ভূঁইয়াকে র্যাব গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
Leave a Reply