বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ঘোষনার সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হতে চলেছে অথচ লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটে- নৌ-বন্দরের এখনো দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ মজুচৌধুরীর হাটে নৌ-বন্দর নির্মান প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তরের স্থাপন করেন আওয়ামীলীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভূমি জরিপ ও অধিগ্রহনের জন্য সার্ভেয়ার নিয়োগ করা হলেও তারা এখনও কাজ শুরু করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। স্থানীয়দের দাবী, নৌ-বন্দরটি নির্মান, চালু ও বাস্তবায়িত হলে এ জেলার সাথে দক্ষিনাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের নতুন সেতুবন্ধন তৈরি হবে। কিন্তু মজুচৌধুরীরঘাটের ইজারা নিয়ে আইনী জটিলতা, লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর জেলার দ্বৈত প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা ও টানাটানির কারনে আটকে আছে নৌ-বন্দরের সার্ভের কাজ।
তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, প্রকল্পটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। নৌ-মন্ত্রনালয়ে কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে ভূমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মজুচৌধুরীরহাটের অবস্থান। মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চ ও ফেরীঘাট থেকে বরিশাল, চট্রগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের ২১ জেলার মানুষ দীর্ঘদিন যাবত এ নৌ-রুট ব্যাবহার করে প্রতিদিন শতশত যানবাহনের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে আসছে। এখানে নৌ-বন্দর নির্মানের দাবী ছিল এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের। দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরে এসে নৌ-বন্দর নির্মান প্রকল্পসহ বেশ কিছু কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । এর আগে একই বছরের ১২ জানুয়ারী নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের টিএ শাখা রাষ্ট্রপ্রতির আদেশক্রমে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু ঘোষনার সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনো বন্দর নির্মানের কোন অগ্রগতি নেই।
অভিযোগ রয়েছে, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটি এর যৌথ সার্ভে কমিটির সমন্বয়হীনতার কারনে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সংকট তৈরি হয়। এতে করে বন্দর নির্মান প্রকল্পটি নিয়ে উদ্ভিগ্ন ও চরম হতাশায় পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ সাধারনণ মানুষ। ফলে দ্রুত বন্দর বাস্তবায়ন চাই এ জেলাবাসী। নৌ-বন্দর বাস্তবায়নের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধনসহ নানা কর্মসুচি পালন করে আসছে জেলার সর্বস্তরের মানুষ। এ দিকে একাধিকবার লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার সাথে লঞ্চ চলাচলের ঘোষনা দিয়েও এখন পর্যন্ত আলোরমুখ দেখেনি জেলাবাসী। এতে করে হতাশা বিরাজ করছে ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে।
লক্ষ্মীপুর বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক লআবুল কালাম আজাদ, লক্ষ্মীপর সম্পাদক-প্রকাশক পরিষদের আহব্বায়ক মোঃ সহিদুল ইসলাম সহিদ ও সগস্য সচিব কাজী মাকছুদুল হক সহ অনেক ব্যবসায়ী জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হলেও বন্দরের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি না থাকায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের দাবী, মজুচৌধূরীরহাটে নৌ-বন্দরটি বাস্তবায়িত হলে এ জেলার সাথে বরিশাল, চট্রগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের ২১ জেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের নতুন সেতুবন্ধন তৈরি হবে। তৈরি হবে অসংখ্য শিল্প কলকারখানা ও গড়ে উঠবে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দ্রুত প্রকল্পের নির্মান কাজ শুরু করার দাবী স্থানীয়দের।
লক্ষ্মীপুর জেলা উন্নয়ন বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব হোসাইন আহমেদ হেলাল জানান. নৌ-বন্দর নির্মানের জন্য সরকারকে জমি দিতে প্রস্তুত। এখনো বন্দরের কোন অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশার মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী সহ এখানকার সাধারণ মানুষ। সরকার নদী বন্দরের যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে এ বন্দর হবে ব্যবসায়ীদের প্রান কেন্দ্র। প্রসার ঘটবে লাখ লাখ মানুষের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে।
চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক একেএম কাইছারুল ইসলাম বলেছেন, মজুচৌধুরীরঘাটের ইজারা নিয়ে আইনী জটিলতা, দ্বৈত প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার কারনে আটকে আছে নৌ-বন্দরের সার্ভের কাজ। দাপ্তরিক এ সব জটিলতা নিষ্পত্তি না হলে বন্দরের সার্ভের কাজ কোনভাবে শুরু করা যাচ্ছেনা। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহন, সীমানা নির্ধারনসহ বন্দরের উন্নয়নমূলক কাজ পুরোপুরি বিআইডব্লিউটিএর কাছে হস্তান্তর না হওয়ায় কাজের ধীরগতি বলে জানান তিনি। তারপরও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জমি অধিগ্রহন ও সার্ভের কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন তিনি।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসাইন আকন্দ বলেছেন, প্রকল্পটি নৌ-মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ভূমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যে নৌ-বন্দরের কাজ শুরু হবে।
Leave a Reply