নুরুল ইসলাম বাবুল :
কেউ যদি রাজনীতি শিখতে চাও
জয়নাল ভাই এর জীর্ণ কুটির খানা দেখে এসো,
জীবন ক্ষয়ে যায় নদীর পানি বহে যায়
প্রিয়জনরা চলে যায় না ফেরার দেশে।
কোন উপমা দিয়ে জয়নাল ভাইকে খাটো করতে চাই না, গণমানুষের প্রিয় “ভালো মানুষ” জয়নাল ভাই এর সাথে প্রথম পরিচয় ১৯৮১ সালের ১৭ মে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দিন। স্কুলে ১ম সাময়িক পরিক্ষা ফাঁকি দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখার জন্য লক্ষীপুর থেকে ছেড়ে আসা বাসে উঠে পড়ি। তখন আমি প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক। বাসে সিট খালি না থাকায় প্রিয় জয়নাল ভাই এর পার্শ্ব ঘেঁষে দাঁড়াই, তিনি খুটিয়ে খুটিয়ে পরিচয় জেনে নিলেন। অনেকটা পথ যাওয়ার পর তিনি দাঁড়িয়ে সিট খালি করে বসতে বললেন। এতো বড় এক জন নেতা সিট খালি করে বসতে বলাতে অনেকটা ভয়ে ভড়কে গেলাম। অনেক বার বলাতে সিটে বসলাম, তিনি দাঁড়িয়ে ভরাট কন্ঠে শ্লোগান দিচ্ছেন আর অন্যেরা তাঁর সাথে গলা মিলিয়ে শ্লোগান দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে আমিও গলা মিলাচ্ছি। পরে জেনে নিলাম তিনি লক্ষীপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সেই আলাপচারিতার মাঝে তাঁর ভালোবাসা প্রেমে আষ্টেপিষ্টে বন্দি হয়ে গেলাম ঠিক শেষ দিন পর্যন্ত এমন মায়ার বন্ধন এতো টুকু চিড় ধরেনি কখনো? এই ক্ষুদ্র জীবনে তাঁর সাথে অতিতের স্মৃতিরপট রোমন্থন করে কখনো শেষ করা যাবে কি? ৮১ সাল থেকে কতবার কত খানে দেখা, কথা বলা অনেক খানি স্মৃতি হয়তোবা অস্পষ্ট থেকেই যাবে। তার পরও কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।
তিনি চন্দ্রগঞ্জ আসলে মরহুম নুরুল হুদা মিয়া (বড় মিয়া) ঘর (নিউ মার্কেট গেইট সংলগ্ন) বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর নবী চৌধুরীর হোটেল কমবালা, পরর্বতী হোটেল ম্যাগফাই, বর্তমান আয়েশা ইলেকট্রনিক্স, বাজার কমিটির সভাপতি ওবায়দুল হক পাটোয়ারীর দোকান, কোম্পানি সাহেবে গদীঘর,(মরহুম ইব্রাহিম মিয়া আজ্জিজ কোম্পানি) বর্তমানে হাসেম অটো রাইস মিল এর অফিসে বসতেন। রাজনৈতিক প্রোগ্রামের বাহিরেও এই সব জায়গায় কত কথা কত আলাপচারিতা। আমার কলেজ জীবনে তিনি কফিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ গভোনিং বডির সদস্য, আমি ছিলাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন ক্ষুদ্র কর্মী মাত্র। ছাত্র নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখা। এই সৎ সহজ সরল লোকটির পায়ে নেই দামী জুতা ছিলো প্লাস্টিকের সেন্ডেল, গায়ে কমদামী পাঞ্জাবি, সার্ট, পরনে পায়জামা পরিহিত লোকটি দেখিছি, পর্যবেক্ষন করেছি, ভরাট কন্ঠের বক্তৃিতা কত যে শুনেছি বলে শেষ করা যাবে না।
অথচ তিনি ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস'(বি.এল.এফ/মুজিব বাহিনী)’র তৎকালিন লক্ষীপুর থানার ডেপুটি প্রধান, রণাঙ্গনের সমুখ যুদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশমাতৃকার প্রেমে দীর্ঘ নয় মাস গ্রাম গ্রামান্তরে, পথপ্রান্তে রোদে শুখিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নিশ্চিত হাতের মুঠো মৃত্যু উপেক্ষা করে চুটে চলেছেন স্বপ্নের স্বদেশ শত্রু মুক্ত করতে। ঠিকেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করলেন। ফিরে ফেলেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম স্বর্ণালী সকাল। হলেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পোঁড় খাওয়া একজন কর্মী। এর চাইতে বড় পরিচয় আর কি হতে পারে? লক্ষীপুর মহকুমা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদক, আমৃত্যু জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অভিষিক্ত ছিলেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃত্বের ও ছিলেন।
১২ নং চরশাহী ইউনিয়নবাসী ভালোবাসার প্রেমে বন্দি করে দু’দুবার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিলেন। তাই ১২ নং চরশাহী ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়ী তাঁর বাড়ী প্রতিটি ঘর তাঁর ঘর। সকলেই তাঁর আপন কেউ নহে তাঁর পর। তাই পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ ৪ সেপ্টেম্বর মহান আল্লহ্ পাকের ডাকে শাড়া দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর সকল কর্ম গণমানুষের কাছে একটি ইতিহাস যাহা গোটা লক্ষীপুর কেন? দেশবিদেশে যে তাঁকে জানে এবং চিনে সেখানেই শোকের ছায়া নেমে আসে। লক্ষীপুর, রুপাচরা সফিউল্লাহ্ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন, নিজ গ্রাম মসজিদ প্রাঙ্গণ লোকে লোকারন্য, হাজার হাজার মানুষের ঢল প্রিয় মানুষটিকে শেষ দেখার জন্য। জীবনে তিনি হয়তবা এমটাই চেয়েছিলেন তাই তিনি সেই ভাবে ফেলেন মানুষের অশেষ দোয়, হৃদয় নিড়নো ভালোবাসা, অশ্রুজল রাষ্ট্রিয় সন্মান।
মহানআল্লহ পাক আপনি আপনার এই প্রিয় বান্দাকে পবিত্র হিজরী সনের প্রথম মাস মুহররম মাসের ৪ তারিখে তলব করেছেন। মুহররম অর্থ পবিত্র ও সন্মানিত। আপনি এই পবিত্র মাসে আসমান, জমিন, আদি পিতা হয়রত আদম(আঃ) কে সৃষ্টি সহ অনেক নেয়ামত দান করেছেন। তাই আপনার দেওয়া অসংখ্য নেয়ামত কে উছিলা করে জয়নাল ভাইকে জান্নাতুল ফেরদাউস দানকরুন। আমিন।
Leave a Reply