বিশেষ প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাংবাদিক সমাজ। রোববার সন্ধ্যায় জেলার সম্পাদক-প্রকাশক পরিষদের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। জেলা শহরে পরিষদের নিজস্ব কার্যালয়ে এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক রবের সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় জেলার বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকরা এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, উৎকন্ঠা প্রকাশসহ ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন।
এ সময় সম্পাদকরা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সমঝোতা কিংবা মামলা প্রত্যাহার না করলে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন পালনসহ পৌরসভাকে ঘিরে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি, অনিয়ম, আত্মসাৎ ও জনগণকে জিম্মী করে বাহিনীর ত্রাসের রাজত্ব, অনুসারীদের দিয়ে মাদকের বাণিজ্য, সহযোগিদের নানা কুকীর্তিসহ অতীত ইতিহাস নিয়ে একযোগে অনুসন্ধানী ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও সবধরণের সংবাদ বর্জনের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
সভায় দৈনিক উপকূল প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক মোঃ জহিরুল ইসলাম, দৈনিক মুক্তবাঙ্গালীর সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ডাঃ কামালুর রহিম সমর, দৈনিক কালের প্রবাহ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাকছুদুল হক, দৈনিক শীর্ষ সংবাদের সম্পাদক নজরুল ইসলাম জয়, দৈনিক কালের প্রত্যাশা পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি সাইফুল ইসলাম জুয়েল, দৈনিক সবুজ জমিন পত্রিকার সম্পাদক আফজাল হোসেন সবুজ, সাপ্তাহিক নতুনপথ পত্রিকার সম্পাদক বিএম সাগর, দৈনিক উপকূল কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক মামুনুর রশিদসহ আরো অনেকেই বক্তব্য রাখেন। এসময় সকলেই ষড়যন্ত্রমুলক এ ঘটনায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
অন্যথায় একযোগে রায়পুরের মেয়র ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, ডাকাতিয়া নদী দখল ও রায়পুরের মেয়রের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলায় করা হয়েছে। শনিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে রায়পুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক (সাবেক বিএনপির নেতা বলে কথিত) মো. ইসমাঈল হোসেন খোকন বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল জলিল মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় দৈনিক বাংলার মুকুল পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক একেএম মিজানুর রহমান মুকুল, নির্বাহী সম্পাদক আফরোজা আক্তার রাঙা, পত্রিকাটির রায়পুর উপজেলা প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম টিটু এবং দেনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মোহনা টিভির রায়পুর প্রতিনিধি মো. এসএন উদ্দিন রিয়াদকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে মেয়র উল্লেখ করেন, গত ২৮ অক্টোবর তারিখে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় দৈনিক বাংলার মুকুল পত্রিকায় তার নাম জড়িয়ে যে সংবাদটি প্রকাশিত হয় তা মিথ্যা ও বানোয়াট। সংবাদটিতে তার সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যদিকে দৈনিক বাংলার মুকুল পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান মুকুল বলেন, প্রকাশিত সংবাদের প্রিন্ট ভার্সনে একটি শব্দ অনিচ্ছাকৃত ভাবে প্রেসটাইপে ভুল হয়েছে। যার জন্য পরের দিন ২৯ অক্টোবরের সংখ্যায় ও অনলাইন ভার্সনে সংশোধনী দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপরেও মামলা হওয়ার বিষয়টি মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে রামগঞ্জ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম বাবরের সভাপতিত্বে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন পাটোয়ারী সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- প্রেসক্লাবের সিনিয়র সাংবাদিক মনির হোসেন বাবুল, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি খালেদ মাহমুদ ফারুক, হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, সাবেক সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন বাচ্চু, সিনিয়র সাংবাদিক পাটোয়ারী হোসেন শরীফ, প্রেসক্লাবের সহ-সাধারণ সম্পাদক এমরান হোসেন পাটোয়ারী, কোষাধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেন জাহাঙ্গীর, দপ্তর সম্পাদক হালিম খান লিটন, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ রানা মনি, আব্দুল আউয়াল পাটোয়ারী, সাধারণ সদস্য ইব্রাহিম মিয়া, আমির হোসেন আমু, আমিনুল ইসলাম মুকুল, সাংবাদিক জাকির হোসেন সুমন প্রমূখ।
Leave a Reply