বিশেষ প্রতিনিধি :
প্রান্তিক চাষিদের অধিকার হরণ করে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন বীজ নিয়ে কোন সিন্ডিকেট দল বাণিজ্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সয়াবিনের উৎপাদন, বাজার সম্প্রসারণ ও গুণগতমান বৃদ্ধি বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুশিয়ারি দেন তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সফিউজ্জামান ভূইয়ার সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মহী উদ্দিন চৌধুরী, জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেল্লাল হোসেন খান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও প্রান্তিক কৃষকগণ।
জেলা প্রশাসক বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা সয়াবিনের রাজধানী। চাষীরা সয়াবিন উৎপাদন করে বিশ্বের কাছে জেলার মুখ উজ্জল করে। আর সুবিধা ভোগীরা তাদের বীজ নিয়ে তাল বাহানা করবে। এমটি হতে দেয়া যাবে না। কৃষকদের বীজ, সারসহ কৃষি উপকরণ বিতরণে কোন বানিজ্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সয়াবিন উৎপাদনে ব্যাংক গুলোকে হয়ানি ছাড়া কৃষকদের মাঝে ৪ শতাংশ সুধে ঋণ বিতরণের আহ্বান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক কর্তৃক আয়োজিত এ সেমিনারে নোয়াখালী কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মহী উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সয়াবিন উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন তেলবীজ ফসল। বর্তমানে ফসলটি ৩৬ ধরণের পুষ্টিকর খাবারের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সয়াবিনের আবাদ ও উৎপাদন বাড়িয়ে বেকারী শিল্প স্থাপন করা হলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত ৪৫ বছরে সয়াবিনের উৎপাদন বেড়েছে ৫০০ ভাগ। বিশ্বের ৭টি দেশে সয়াবিন উৎপাদন হয়ে থাকে। এটি অর্থনীতিতে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সয়াবিনের আবাদ হলেও নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর সয়াবিন সম্মৃদ্ধ এ অঞ্চলে আবাদি জমির পরিমান প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর ছাড়িয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর সদরের দক্ষিণাংশ এবং রায়পুর উপজেলার চর বংশী, চর আবাবিল ও চর কাছিয়া মিলিয়ে গত রবি মৌসুমে প্রায় ৫৪ হাজার ৪৫৫ হেক্টর এবং নোয়াখালী জেলায় ১৬ হাজার ২৮২ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলায় আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৮০ হেক্টর। তবে স্থানীয় চাহিদার তুলনায় এখনো সয়াবিন উৎপাদন অপ্রতুল্য। পোল্ট্রি শিল্প বিকাশিত হওয়ায় এর স্থানীয় চাহিদা রয়েছে ২৫-২৭ লক্ষ টন। অথচ বৃহত্তর নোয়াখালীতে সয়াবিন উৎপাদন হয় মাত্র ১ লক্ষ টন। তাই সয়াবিন উৎপাদন বৃদ্ধি, গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনন্টিটিউট। সয়াবিন চাষে চাষীদের উৎপাদন খরচ, শ্রম শক্তি লাগব কল্পে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সয়াবিন চাষ পদ্ধতিকে আরো কৃষক বান্ধব করতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনন্টিটিউটের বীজ বপন যন্ত্র এবং শুষ্ক নিড়ানি যন্ত্র ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেছে। এতে সয়াবিন উৎপাদনে ৫৬ ও ৮৫ ভাগ খরচ কমবে। এতে লাভবান হবে কৃষক, সয়াবিন উৎপাদনে আরো সম্মৃদ্ধ হবে দেশ।
Leave a Reply