প্রতিদিনের খবর ডেস্কঃ
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, ‘প্রেসক্লাবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর পুলিশের হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত।’
আজ শনিবার বিকেলে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘পৈশাচিক এই হামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণের অসংখ্য নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন। লাঠিপেটা করে অনেকের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘সমাবেশ শুরুর সময় থেকেই পুলিশ বিনা কারণে উসকানি ও মারমুখী আচরণ করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই সরকারের ভাবমূর্তি এমন তলানীতে ঠেকেছে যে, জনগণের মনোযোগ ভিন্ন দিকে সরাতেই সরকার সিরিজ ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’
‘আজকের প্রেসক্লাব এলাকা ছিল যেন রক্তমাখা রণক্ষেত্র। দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের ওপর পুলিশ যে হামলা করেছে তা কেবলমাত্র কাপুরুষরাই করতে পারে। ডা. জাহিদ অনেক অনুরোধ করার পরেও পুলিশ তাঁকে রেহাই দেয়নি, তাঁর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আজকে পুলিশের আচরণ ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ, বেপরোয়া ও সন্ত্রাসী ক্যাডারদের মতো। বিএনপির সমাবেশের ওপর সরকার পুলিশকে যে লেলিয়ে দিয়েছে সেটির এক অমানবিক নিষ্ঠুর দৃশ্য দেশবাসী আবারও অবলোকন করল। সরকারের লাঠিপেটার-গণতন্ত্র জনগণ আরেকবার প্রত্যক্ষ করল।’
রিজভী দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের হৃদয় কখনোই মুক্ত ও উদার ছিল না। তাই র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা মেশিনারি দিয়ে গুম-খুন-মিথ্যা মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার ও নিপীড়ণের পথ বেছে নিয়েছে। গত ১২টি বছর ধরে দেশ থেকে সভা-সমাবেশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজকে প্রেসক্লাবের ঘটনা ফ্যাসিবাদের অবয়বের চূড়ান্ত রূপ।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী সমাবেশ থেকে আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। আহত নেতাকর্মীদের সুস্থতা কামনা করেন। তিনি আরও দাবি করেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুলিশি হামলায় আহত হয়েছেন ১১৯ জনের অধিক নেতাকর্মী। আর পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।
এর আগে আজ দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য দেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের বাগবিতণ্ডা ও পরে সংঘর্ষ হয়।
সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি সরানোর জন্যই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা (প্রতিবেদন) তো কোটি কোটি মানুষ দেখে ফেলেছে। জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল করা যাবে না।’
রিজভী আরো বলেন, ‘যে লোক (জিয়াউর রহমান) রাজনীতিকে গ্রামে নিয়ে গেছেন, যে মানুষটি মিশে ছিলেন কাদামাটি ও পলিমাটির মধ্যে। নদীর উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে যার নাম মিশে আছে, মিশে আছে জনগণের মনে- সেই নাম কোনোদিনও মুছে ফেলা যাবে না।’
ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষকদলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সিনিয়র সহসভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, যুবদল মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজকালের খবর/
Leave a Reply