বিশেষ প্রতিনিধি:
বিষয়টি স্বীকার করে বেডুর পরিচালক প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, সারা দেশের ২৭ হাজার স্কুলের মধ্যে দুই হাজার স্কুল স্যাম্পলিং করে নির্ধারণ করা হবে। হাওর, পাহাড়, চরাঞ্চলসহ দুর্গম এলাকার স্কুলগুলোকে ক্যাটাগরিজ করে নির্ধারণ করা হবে। এই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরির টার্গেড রয়েছে। করোনার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সমীক্ষা কিভাবে পরিচালনা করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফেস টু ফেস সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে আমরা সরাসরি সাক্ষাৎকার নিতে পারছি না। অনলাইনে কোশ্চেনিয়ারের মাধ্যমে সমীক্ষা চালানো করা হবে। দুই হাজার স্কুলের যেসব শিক্ষক অ্যাসাইনমেন্ট কাজে জড়িত ছিলেন তাদের মতামত নেওয়া হবে। শিক্ষার্থী স্যাম্পলিং ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। প্রতি শ্রেণির ১০ জন শিক্ষার্থীর মতামত নেবো। আর প্রতি শ্রেণির পাঁচ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মতামত নেওয়া হবে। তারপরেও অন্যরা মতামত দিতে চাইলে সুযোগ দেওয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে গবেষক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রধান শিক্ষকদের সহায়তায় নির্বাচিত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অনলাইনের লিংক পাঠানো হবে। তারা সেখানে নির্ধারিত প্রশ্নের জবাব দেবেন।
বেডু সূত্র জানায়, ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনের (এফজিডি) মাধ্যমে সমীক্ষার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা বেড়ে যাওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট স্টেকহোল্ডার যারা ছিল অর্থাৎ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করেই সমীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছে। তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
সমীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর মো. বেলাল হোসেন বলেন, অ্যাসইনমেন্টগুলো কত শতাংশ কার্যকরি হলো, কতভাগ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে, কি কি পরিবর্তন আনা দরকার তা জানতে বেডুকে সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য না পেলে অ্যাসানইমেন্টের বাস্তবতা বোঝা যাবে না। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা সামনের দিনগুলোতে সিদ্বান্ত স নেবো। তিনি আরো বলেন, অ্যাসাইনমেন্টে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কিনা, অ্যাসাইনমেন্ট কার্যকরি কিনা, পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে নেওয়া যাবে কিনা-এ ধরণের অনেক সিদ্বান্ত নিতে সমীক্ষা প্রতিবেদন সহায়ক হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় অ্যাসাইনমেন্ট একটি মাইল ফলক। করোনা পরিস্থিতি চলমান আছে। এর পরিবর্তন না হলে ফিজিক্যাল ক্লাসের বাইরে তথা কথিত পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতি বাদ দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যাই-তাহলে আমাদের কন্টিনিউ অ্যাসেসমেন্ট বাস্তবায়নের সিদ্বান্ত নিতে সমীক্ষা দরকার।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির কারণে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ক্ষতি পোষাতে ৩০ কার্যদিবসের জন্য তৈরি করা হয়েছিল সিলেবাস। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। ওই পাঠদান শুরুর পর সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহের পাঠদান শেষে শিক্ষার্থীদের বাসায় বসে বিষয়ভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা তা শেষ করে শিক্ষকের কাছে জমা দেয়। শিক্ষার্থীকে প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া, মূল্যায়ন, পরীক্ষকের মন্তব্যসহ শিক্ষার্থীকে দেখানো এবং পরে প্রতিষ্ঠানে সেটি সংরক্ষণ করার কাজ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছিল মাউশি।
ওই সময়ে মাউশির নির্দেশনায় বলেছিল, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংসদ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পাঠদান এবং স্কুল পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনলাইন শ্রেণি পাঠদান ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আর মূল্যায়ন যেন তাদের ওপর কোনো মানসিক ও শারীরিক চাপ সৃষ্টি করতে না পারে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিজেরাও যেন তাদের পাঠ অগ্রগতি ও দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দুর্বল দিক ধরে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে সেগুলোর ওপর বিশেষ নজর দিয়ে কাক্সিক্ষত শিখন ফল অর্জনের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষকদের মূল্যায়নসহ অ্যাসাইনমেন্টগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। এনএমএস।
Leave a Reply