লক্ষ্মীপুরের ‘চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের’ সম্মেলন আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক ও দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে (বিদ্রোহী) নির্বাচনে জড়িতসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্তদের কাউন্সিলর তালিকায় নাম থাকায় স্থানীয় নেতাদের মাঝে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ সৃষ্টি হয়েছে।
এমন অভিযোগ করেছেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থীসহ দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। বহুল আলোচিত ‘চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের এই সম্মেলন বুধবার (০১ জুন) হাজিরপাড়া হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এদিকে বিতর্কিত এই কাউন্সিলর তালিকার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নেতারা।
চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপিকে প্রধান অতিথি এবং হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপিকে বিশেষ অতিথি হিসেবে রাখা হয়েছে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ১১নং হাজিরপাড়া ইউনিয়নের নৌকার মনোনীত প্রার্থী নুরুল মোরছালিন মাসরু অভিযোগ করে বলেন- এই ইউনিয়নের কাউন্সিলর তালিকার ৪ নম্বরে কাজী শাফায়েত তিনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং তিনি জামায়াতের একজন পৃষ্ঠপোষক।
এছাড়া বিগত ইউপি নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছেন ৩ নম্বর কাউন্সিলর আব্দুর রহিম, ৭ নম্বর কাউন্সিলর তোফায়েল আহম্মদ, ১১ নম্বর কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান ও ১৪ নম্বর কাউন্সিলর নুর আলম কাজলসহ ১৩, ১৮, ১৯, ২০, ২৫ নম্বর কাউন্সিলর। অথচ, তাদেরকে দলের কাউন্সিলর করা হয়েছে।
৭নং বশিকপুর ইউনিয়নে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আবুল কাশেম জেহাদী অভিযোগ করেন, তার ইউনিয়নে ১৭ নম্বর কাউন্সিলর আব্দুল্যাহ আল নোমানসহ ১৩ জন বিতর্কিত ব্যক্তিকে কাউন্সিলর করা হয়েছে। তারা নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করেছেন। আবুল কাশেম জেহাদী চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের আলোচিত এই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।
এদিকে ১৩নং দিঘলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর ইকবাল ও রেদোয়ান কমলসহ তাদের দুজনকে কাউন্সিলর তালিকায় রাখা হয়নি।
জাফর ইকবাল জানিয়েছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ থানার নেতাদের বার বার ধর্ণা দেওয়ার পরও তাদের নাম তালিকায় স্থান পায়নি।
অন্যদিকে সম্মেলন অনুষ্ঠানের আর মাত্র একদিন বাকী থাকলেও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের স্বাগতিক ইউনিয়ন চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের কাউন্সিলর তালিকা দুপক্ষের কঠোর অবস্থানের কারণে এখনো চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।
চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোশাররফ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, সম্মেলনের আরমাত্র কয়েকঘণ্টা বাকী। অথচ, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের কাউন্সিলর তালিকা প্রার্থী হিসাবে আমি এখনো হাতে পাইনি। এ নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া উত্তরজয়পুর ইউনিয়নে থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী আবুল কাশেম চৌধুরী নিজের পরিবারের ৪ জনকে কাউন্সিলর করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন, অপর সভাপতি পদপ্রার্থী এম ছাবির আহম্মেদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে সাড়ে ৩শ’ কাউন্সিলরের মধ্যে অন্তত ১শ’ জন বিতর্কিত ব্যক্তি রয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন লিকা বলেন, প্রত্যেকটি ইউনিয়নে দলের কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন বিতর্কিতদের কাউন্সিলর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া মো. গোলাম ফারুক পিঙ্কু বিতর্কিত কাউন্সিলর তালিকা তৈরীর বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা বিতর্কিত তালিকা সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন। থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতারাসহ আজকে সন্ধ্যায় আমরা বৈঠকে বসবো। সেখানে বিতর্কিতদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে।
Leave a Reply