বিশেষ প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ২২ জনকে বিসিআইসি’র সার ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ডিলাররা নির্ধারিত ইউনিয়নে সার বিক্রি না করে তা করছেন নিজের সুবিধামত অন্য ইউনিয়নের বড় বাজারে বা থানা শহরে। এতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কৃষকদের একদিকে যেমন সার পেতে চরম ভোগান্তি হচ্ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় হচ্ছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষকেরা যাতে সহজে হাতের নাগালে সঠিক দামে সার কিনতে পারেন, এ জন্য সরকার উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে এবং পৌরসভা এলাকায় ২২জনকে বিসিআইসি সার ডিলার নিয়োগ দেয়।
নিয়োগকৃত ডিলাররা হচ্ছেন- ১নং উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন, মোকাম কালির বাজার মেসার্স তানভীর ট্রেডার্স, ২নং দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়ন, মোকাম পালেরহাট মেসার্স জাকির ট্রেডার্স, ৩নং দালাল বাজার ইউনিয়ন, মোকাম দালাল বাজার মেসার্স মোহাম্মদ ট্রেডার্স, ৪নং চররুহিতা ইউনিয়ন, মোকাম রসুলগঞ্জ বাজার মেসার্স মাসুদ ট্রেডার্স, ৫নং পার্বতীনগর ইউনিয়ন, মোকাম বাংলাবাজার মেসার্স সততা ট্রেডার্স, ৬নং বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন, মোকাম জকসিন বাজার মেসার্স নিউ মাহবুব ব্রাদার্স, ৭নং বশিকপুর ইউনিয়ন, মোকাম পোদ্দারবাজার মেসার্স আর এন্ড জে ট্রেডিং, ৮নং দত্তপাড়া ইউনিয়ন, মোকাম দত্তপাড়া বাজার মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স, ৯নং উত্তরজয়পুর ইউনিয়ন, মোকাম উত্তরজয়পুর মেসার্স হান্নান এন্ড ব্রাদার্স, ১০নং চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন, মোকাম চন্দ্রগঞ্জ বাজার মেসার্স সোহাগ ট্রেডার্স, ১১নং হাজিরপাড়া ইউনিয়ন, মোকাম হাজিরপাড়া বাজার মেসার্স হামিদ ষ্টোর, ১২নং চরশাহী ইউনিয়ন, মোকাম বসুরহাট বাজার মেসার্স কালাম এন্ড সন্স, ১৩নং দিঘলী ইউনিয়ন, মোকাম দিঘলী বাজার মেসার্স আরবার ট্রেডার্স, ১৪নং মান্দারী ইউনিয়ন, মোকাম মান্দারী বাজার মেসার্স সামি এন্টারপ্রাইজ, লাহারকান্দি ইউনিয়ন, মোকাম জকসিন বাজার মেসার্স ফারুক ব্রাদার্স, ১৬নং শাকচর ইউনিয়ন, মোকাম হাজিরহাট বাজার মেসার্স কৃষি বিতান, ১৭নং ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন, মোকাম ভবানীগঞ্জ বাজার মেসার্স সুবর্ণা এন্টারপ্রাইজ, ১৮নং কুশাখালী ইউনিয়ন, মোকাম শান্তিরহাট বাজার মেসার্স মা চাঁদনী ট্রেডার্স, ১৯নং তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন, মোকাম নতুন তেওয়ারী বাজার মেসার্স ভূঁইয়া ষ্টোর, ২০নং চররমনীমোহন ইউনিয়ন, মোকাম মজুচৌধুরীরহাট মেসার্স কামরুল ইসলাম, ২১নং টুমচর ইউনিয়ন, মোকাম টুমচর বাজার মেসার্স সোহেল ট্রেডার্স ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মোকাম থানারোড, মেসার্স মাহবুব ব্রাদার্সসহ ২২টি।
অভিযোগ রয়েছে, ৯নং উত্তরজয়পুর ইউনিয়নের জন্য নির্ধারিত বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স হান্নান এন্ড ব্রাদার্স ওই ইউনিয়নে সার বিক্রি করেন না। তিনি কৃষকদের মাঝে খুচরা সার বিক্রির জন্য মোকাম খুলেছেন চন্দ্রগঞ্জ বাজারে এবং সার মজুদ রাখার জন্য বিশাল গোডাউন ব্যবহার করেন চন্দ্রগঞ্জ বাধেঁরগোড়া নামকস্থানে।
এছাড়াও লাহারকান্দি এবং বাঙ্গাখাঁ এই দুটি ইউনিয়নের মোকাম জকসিন বাজারে হওয়ায় ইউনিয়ন দুটির প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কৃষকরা জকসিন বাজারে এসে সার কিনতে চরম ভোগান্তির পাশাপাশি সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে প্রচুর। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে উত্তরজয়পুর ইউনিয়নের কৃষকদের।
উত্তরজয়পুর ইউনিয়নে নির্ধারিত সার ডিলার মেসার্স হান্নান এন্ড ব্রাদার্স বিগত ২০ বছরেও ওই ইউনিয়নে সার বিক্রির মোকাম চালু করেননি। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা কৃষি অফিসের একশ্রেণির কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর ধরে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ডিলার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে মেসার্স হান্নান এন্ড ব্রাদার্স।
স্থানীয় কৃষক সোলায়মান, শুক্কুর আলী, রশিদ মিয়াসহ ইউনিয়নের অন্তত ২০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজ ইউনিয়ন থেকে সার কিনতে পারলে তাঁদের দুর্ভোগ কমত এবং পরিবহন খরচ ও সময় কম লাগত।
পাশাপাশি নির্ধারিত ডিলার থেকে সার কিনতে না পারায় স্থানীয় খুচরা দোকানগুলোতে সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) সার কিনতে হয় তাঁদের।
উত্তরজয়পুর ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষি সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, তার সমিতিতে সাড়ে ৯শ’ কৃষক অন্তর্ভূক্ত আছেন।
কিন্তু মেসার্স হান্নান এন্ড ব্রাদার্স প্রতিবছর এই ইউনিয়নে
বিসিআইসি সার ডিলার নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও উত্তরজয়পুরে কখনো সার বিক্রির জন্য মোকাম খোলেননি। ডিলার মালিকের বাড়ি চন্দ্রগঞ্জে হওয়ায় তিনি সেখানে থেকে ডিলার কার্যক্রম চালান। এতে এই ইউনিয়নের কৃষকরা ন্যায্য দামে সার পাচ্ছেন না এবং দূর থেকে সার আনতে গিয়ে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকসহ ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা সার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, এক ইউনিয়নের ডিলার অন্য ইউনিয়ন থেকে সার সরবরাহ করার সুযোগ নেই। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ওই সার ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
Leave a Reply