বিশেষ প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে অর্শ্ব, গেজ, ওরিশ-ভগন্দরসহ জটিল ও কঠিন রোগের ভুয়া চিকিৎসক সেজে দীর্ঘদিন মানুষের সাথে প্রতারণার অভিযোগে শর্ম্মা মেডিকেল হলের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৭ আগস্ট) দুপুরে জেলার সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ শর্ম্মা মেডিকেল হলে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম সিরাজুস সালেহীন। এ সময় চিকিৎসকদের কোন ডিগ্রী না থাকায় এবং প্রতিষ্ঠানটির কোন লাইসেন্স না থাকায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে র্যাব ও প্রশাসনের যৌথ অভিযানেও প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছিল। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালাবেনা বলে মুচলেকা দেয় সেখানের কথিত চিকিৎসক। অভিযানের সময় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি ডা. সাইফুল ইসলাম শরীফ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজারের সমতা সিনেমা হলের পাশে থাকা শর্ম্মা মেডিকেল হলে একই পরিবারের চারজন সদস্য দীর্ঘদিন যাবত জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। এমবিবিএস ডিগ্রিধারী না হয়েও সেখানে জটিল রোগের চিকিৎসা দেন রনজিৎ শর্ম্মাধিকারী, অনিতা রানী শর্ম্মাধিকারী, প্রণব শর্ম্মাধিকারী ও সুমিতা রানী শর্ম্মাধিকারী নামের চার ব্যক্তি। এরা সকলে নামের আগে ডাঃ লাগিয়ে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলা শহরের নতুন বাজার এলাকায় চেম্বার খুলে নিয়মিত রোগী দেখেন। চিকিৎসার নামে তারা রোগীদের অপারেশনও করান।
9
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শর্ম্মা মেডিকেল হলের কথিত চিকিৎসক প্রণব শর্ম্মাধিকারী যেসব ডিগ্রী ব্যবহার করছেন, এসব ডিগ্রীর বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এরকম কোনো ডিগ্রীর অস্তিত্ব নেই। তার স্ত্রী সুমিতা রানীও তার মতো ডিগ্রি ব্যবহার করেন। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে তিনিও এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। এনিয়ে ২০১৬ সালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই বছরের ৩১ আগস্ট উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিনগালা করে দেয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে পুনরায় অপচিকিৎসার কার্যক্রম চালায় তারা।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে মেডিকেল কনসালট্যান্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি ডা. সাইফুল ইসলাম শরীফ বলেন, এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতে পারে না। তারা নামের আগেও ডাঃ লিখতে পারবে না। চন্দ্রগঞ্জের শর্ম্মা মেডিকেল হলে যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাদের এসব জটিল রোগের চিকিৎসা এবং অপারেশন করানোর মতো কোন প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবির বলেন, চন্দ্রগঞ্জের শর্ম্মা মেডিকেল হলের বিরুদ্ধে সর্বসাধারণের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা যাতে মেডিকেল হলের কার্যক্রম চালিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারি থাকবে।
Leave a Reply