বিশেষ প্রতিনিধি :
শারীরিকভাবে মারধরসহ অমানষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে স্ত্রী আবিদা সুলতানা (২২) বাদি হয়ে স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-লক্ষ্মীপুর আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিরাজুদদৌলা কুতুবী মামলাটি আমলে নিয়ে সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন, বাদিপক্ষের আইনজীবী এ্যাড. জসীম উদ্দিন সুমন। আগামী ১৫ জানুয়ারী তারিখে উক্ত মামলার শুণানির দিন ধার্য্য আছে।
আসামিরা হলেন, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জস্থ শ্রমিক হোটেলের মালিক মৃত জসীম উদ্দিনের পুত্র ওমর ফারুক পুলক (২৮) ও তার মা’ জমিলা বেগম (৫০)। তারা চন্দ্রগঞ্জ নিউ মার্কেট সংলগ্ন ৫তলা ভবনের তৃতীয়তলায় একটি নিজস্ব ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছিলেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর তারিখে বেগমগঞ্জ উপজেলার উত্তর জীরতলী মহব্বতপুর গ্রামের আলী আকবরের কন্যা ও মামলার বাদিনী আবিদা সুলতানার সাথে ৭ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে ওমর ফারুক পুলকের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী ওমর ফারুক পুলক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রতিনিয়ত বাসায় এসে বিভিন্ন অজুহাতে স্ত্রী আবিদা সুলতানাকে মারধরসহ অকথ্য ভাষায় গালাগালাজ ও মানষিকভাবে নির্যাতন চালাতো। আবিদার কোলে ফারহান নামে ২ বছরের একটি পুত্র সন্তান আছে। এই পুত্রটি গর্ভে থাকাবস্থায়ও তার উপর নির্যাতন চালাতো ফারুক। কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে স্ত্রী আবিদা সব নির্যাতন সহ্য করতেন। সবশেষ গত আগষ্ট মাসের ৩ তারিখ বুধবার সকালে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবিতে ওমর ফারুক পুলক আবারো আবিদার উপর অমানষিক নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে কোমরে থাকা প্যান্টের বেল্ট দিয়ে (চাবুকের ন্যায়) এবং পায়ের বুট জুতা খুলে পেটানো হয় গৃহবধূ আবিদাকে। এসব ঘটনায় আহত গৃহবধূ আবিদা সুলতানাকে তার পিতা-মাতা এসে উদ্ধার করে বেগমগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে চিকিৎসা করান।
এ দিকে মামলার বাদি, বাদির আইনজীবী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা গেছে, মামলা দায়েরের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বাক্ষীদের তাঁর কার্যালয়ে ডাকেন। সেখানে স্বাক্ষীরা স্বাক্ষ্য দিতে এলে আসামি ফারুকের ভাড়াটিয়া লোকজন স্বাক্ষীদের মামলা তুলে নেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দেন।
তবে আদালতে মামলা দায়েরের আগে ভিকটিম গৃহবধূ মামলাটি চন্দ্রগঞ্জ থানায় দায়ের করতে গেছেন। কিন্তু চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি গ্রহণ না করায় নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলাটি দায়ের করতে বাধ্য হন তিনি।
ভিকটিম আবিদা সুলতানার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। এখন যা হওয়ার আদালতের মাধ্যমে হবে।
অভিযুক্ত আসামি ওমর ফারুক পুলকের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার পারিবারিক বিষয়। সাংবাদিকদের বিষয় নয়। আমি পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
মামলার তদন্তকারী জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর) সুলতানা জোবেদা খানম মুঠোফোনে বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বাদি ও স্বাক্ষীদের নিয়ে বসেছি। আসামিপক্ষ সমঝোতার জন্য চাপসৃষ্টি করছে। তবে আমি নির্ধারিত তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবো।
Leave a Reply