লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
আধুনিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠু পরিবেশে পাঠদান, শিক্ষকদের দক্ষতা ও আন্তরিকতা এবং একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনের জন্য জরুরি এমন সব আয়োজন প্রাইভেট স্কুল গুলোকে অভিভাবকদের নিকট আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যার ফলে খরচ একটু বেশি হলেও প্রাইভেট স্কুল ও কিন্ডার গার্টেন গুলোর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। তবে এ তুলনায় সরকারি স্কুল গুলো পিছিয়ে আছে বলে মনে করছেন লক্ষ্মীপুরের শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ১১শ’। এর মধ্যে প্রাইভেট স্কুল ও কিন্ডার গার্টেনের সংখ্যা ৩৬৩। গত ৫ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে জানা গেছে, প্রতি বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ৫০ ভাগই প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষার্থী। বাকি ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী হলো জেলার ৭৩২টি সরকারি স্কুলের। আবার পাশের হারের দিক থেকেও এগিয়ে প্রাইভেট স্কুল গুলো।
অভিভাবক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও শিক্ষার উন্নত পরিবেশের কারণে প্রাইভেট স্কুল আমার পছন্দ। এখানে বাচ্চাদের নিরাপত্তা ও যতেœর বিষয়টিও কমফোর্টফিল করার মতো। তাছাড়া এখানে নিয়মানুবর্তিতা ব্যবস্থাটি খুবই চমৎকার।
সরেজমিনে জেলার বেশ কিছু প্রাইভেট স্কুল ও কিন্ডার গার্টেন পরিদর্শন করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহের বাস্তবতা দেখা যায়। কোনো কোনো স্কুলে মাসিক বেতনসহ অন্যান্য ফি তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও অভিভাবকদের আগ্রহের কমতি নেই। এর কারণ জানতে চাইলে অভিভাবক আবুল খায়ের ভুলু ও নাসরিন সুলতানা মুন্নি বলেন, শিক্ষকদের জবাবদিহি ও আন্তরিকতার অভাবে অধিকাংশ সরকারি স্কুলে শিক্ষার মান একেবারে নড়বড়ে। শহর কেন্দ্রীক দু-একটিতে ব্যতিক্রম থাকলেও গ্রামগঞ্জের প্রতিটি স্কুলেই শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ দশা। তাই খরচ একটু বেশি হলেও সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাই। এক্ষেত্রে প্রাইভেট স্কুলের বিকল্প দেখছি না।
একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা, পিঠা উৎসব, শিক্ষা সফর, বিতর্ক উৎসবসহ নানা আয়োজনের কারণে প্রাইভেট স্কুল গুলোর প্রতি শিক্ষার্থীদেরও আগহ দিনদিনই বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। আনন্দের সঙ্গে এসব স্কুলের শতভাগ শিক্ষার্থী স্কুল ড্রেস পরিধান করে।
১৯৮৮ সালে লক্ষ্মীপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাকলি শিশু অঙ্গন নামে একটি প্রাইভেট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বিগত কয়েক বছরের হিসেব মতে, পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ভালো ফলাফল অর্জনের দিক থেকে জেলার অন্যতম সেরা স্কুল এটি। অধিকাংশ প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্তাব্যক্তিদের সন্তান এ স্কুলে পড়ে বলে জানা গেছে।
কাকলি শিশু অঙ্গনের অধ্যক্ষ শিল্পী পাল বলেন, স্কুলে উন্নত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করার পিছনে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে যেসব স্কুলে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব আছে, সেসব স্কুলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়সারা মনোভাব সুস্পষ্ট। যার কারণে শিক্ষার উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল অর্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে ওইসব স্কুল। এ জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, সরকারি নিয়মনীতি মেনে শিক্ষার উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করায় ইতোমধ্যে লক্ষ্মীপুরের সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে অধিকাংশ প্রাইভেট স্কুল। এ ধারা অব্যাহত রাখতে নিয়মিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে নানা আয়োজন করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রাইভেট স্কুল গুলোর মাধ্যমে জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মান আরো উন্নত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এক ঝাঁক তরুণ, মেধাবী ও উদ্যমী শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সভাপতি প্রফেসর মাহবুব মোহাম্মদ আলী বলেন, শিক্ষার উন্নত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের প্রাথমিক ভিত্তি মজবুত করার ক্ষেত্রে প্রাইভেট স্কুলের তুলনায় পিছিয়ে সরকারি স্কুল গুলো। যার কারণে সচেতন ও শিক্ষিত সমাজের অধিকাংশ নাগরিক তাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট গাফিলতি ও খামখেয়ালিপনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply