শিরোনাম:
চন্দ্রগঞ্জ বাজার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা মাঈন উদ্দিন হামীম স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ চন্দ্রগঞ্জ আইডিয়াল একাডেমিতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সুমাইয়া মেমোরিয়াল স্মৃতি বৃত্তি প্রদান লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো শাহআলম চৌধুরী স্মৃতি বৃত্তি পরীক্ষা চন্দ্রগঞ্জে মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত আলোচনায় ফজলুর রহমান বাবু ও বীনা আক্তারের “তুমি আমার মনের মানুষ” বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব তোফায়েল আহম্মদের মৃত্যুতে সৌদি প্রবাসী বিএনপির দোয়া ও আলোচনা সভা লক্ষ্মীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহম্মদ পাঠাগার উদ্ধোধন বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহম্মেদের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া জিয়া সৈনিকদলের পূর্নাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

প্রচ্ছদ ধর্ম কে আগে সালাম দেবে?

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
  • 368 Time View
প্রতিদিনের খবর ডেস্ক :

‘সালাম’-এর শাব্দিক অর্থ হলো শান্তি, কল্যাণ ও দোয়া। মুমিনদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টির মাধ্যম। সালামদাতা সালামগ্রহীতার জন্য তিনটি কল্যাণময় কাজ একসঙ্গে করে থাকে। সেগুলো হলো- শান্তি কামনা, কল্যাণ কামনা এবং দোয়া। হাদিস শরিফে এই মহৎ কাজকে সামাজিক জীবনে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠার একমাত্র মাধ্যম বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হল, কে আগে সালাম দেবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আরোহী ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তিকে, দণ্ডায়মান ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং অল্পসংখ্যক লোক বেশিসংখ্যক লোককে সালাম দেবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬২৩৩)

আর ছোট বড়কে এবং আগমনকারী ব্যক্তি অভ্যর্থনাকারীকে সালাম দেবে। তবে সর্বাবস্থায় শুধু ছোট বড়কেই সালাম দিতে হবে—এমনটি নয়; বরং বড়রাও ছোটদের সালাম দিতে পারবে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) দুটি শিশুর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদের সালাম করেছিলেন। (মুসলিম, হাদিস: ২১৬৮)

এই প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হল-

১. আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কি?’ তিনি বললেন, ‘(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।’

২. হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন। তখন তাকে বললেন, ‘তুমি যাও এবং ঐ ফেরেস্তামন্ডলীর একটি দল বসে আছে, তাদের উপর সালাম পেশ কর। আর ওরা তোমার সালামের কী জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শোনো। কেননা, ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততির সালাম বিনিময়ের রীতি।’ সুতরাং তিনি (তাদের কাছে গিয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’ , তারা উত্তরে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ’, অতএব তারা ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ শব্দটা বেশি বললেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)

৩. হযরত আবু উমারা বারা ইবনে আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাতটি (কর্ম করতে) আদেশ করেছেন-

ক. রোগী দেখতে যাওয়া, খ. জানাযার অনুসরণ করা গ. হাঁচির (ছিঁকের) জবাব দেয়া ঘ. দুর্বলকে সাহায্য করা, ঙ. নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা চ. সালাম প্রচার করা, এবং ছ. শপথকারীর শপথ পুরা করা। (বুখারী ও মুসলিম)

৪. হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্য়ন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’ (মুসলিম)

৫. আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্নদান কর, আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং লোকে যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিযী হাসান সহীহ)

৬. তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা’ব হতে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ)-এর কাছে আসতেন এবং সকালে তার সঙ্গে বাজারে যেতেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা সকালে বাজারে যেতাম, তখন তিনি প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতা, স্থায়ী ব্যবসায়ী, মিসকীন, তথা অন্য কোন ব্যক্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাকে সালাম দিতেন।’ তুফাইল বলেন, সুতরাং আমি একদিন (অভ্যাসমত) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে তার সঙ্গে বাজারে যেতে বললেন। আমি বললাম, ‘আপনি বাজারে গিয়ে কী করবেন? আপনি তো বেচাকেনার জন্য কোথাও থামেন না, কোন পণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন না, তার দরদাম জানতে চান না এবং বাজারের কোন মজলিসে বসেনও না। আমি বলছি, এখানে আমাদের সাথে বসে যান, এখানেই কথাবার্তা বলি।’ (তুফাইলের ভুঁড়ি মোটা ছিল, সেই জন্য) তিনি বললেন, ‘ওহে ভুঁড়িমোটা! আমরা সকাল বেলায় বাজারে একমাত্র সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে যাই; যার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, আমরা তাকে সালাম দিই।’

সালাম দেওয়ার পদ্ধতি-

প্রথম যে সালাম দেবে তার এরূপ বলা (উচিত), ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’, এটা মুস্তাহাব। সে বহুবচন সর্বনাম ব্যবহার করবে; যদিও যাকে সালাম দেয়া হয় সে একা হোক না কেন। আর সালামের উত্তরদাতা বলবে ‘ওয়াআলাইকুমুস সালামু ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ, অর্থাৎ সে শুরুতে সংযোজক অব্যয় ‘অ’ বা ‘ওয়া’ শব্দ ব্যবহার করবে।

১. ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে এভাবে সালাম করল ‘আসসালামু আলাইকুম’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জবাব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসে গেলে তিনি বললেন, ‘ওর জন্য দশটি নেকী।’ তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম পেশ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন এবং লোকটি বসলে তিনি বললেন, ‘ওর জন্য বিশটি নেকী।’ তারপর আর একজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’ বলে সালাম দিল। তিনি তার জবাব দিলেন। অতঃপর সে বসলে তিনি বললেন, ‘ওর জন্য ত্রিশটি নেকী।’ (আবু দাউদ, তিরমিযী হাসান সূত্রে)

২. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, ‘এই জিব্রীল আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে সালাম পেশ করেছেন।’ তিনি বলেন, আমিও উত্তরে বললাম, ‘ওয়ালাইহিস সালামু অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ।’(বুখারী ও মুসলিম)

এই গ্রন্থদ্বয়ের কোন বর্ণনায় ‘অবারাকাতুহ’ শব্দ এসেছে, আবার কোন কোন বর্ণনায় তা আসেনি। তবুও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর অতিরিক্ত বর্ণনা গ্রহণীয়।

৩. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন, তখন তা তিনবার বলতেন; যাতে তার কথা বুঝতে পারা যায়। আর যখন কোন গোষ্ঠীর কাছে আসতেন তখনও তিনি তিনবার করে সালাম পেশ করতেন। (বুখারী)

৪. মিক্বদাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি স্বীয় দীর্ঘ হাদিসে বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য তার অংশের দুধ রেখে দিতাম। তিনি রাতের বেলায় আসতে এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যে, তাতে কোন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দিতেন না এবং জাগ্রত ব্যক্তিদের শুনাতেন। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাঁর অভ্যাসমত)এসে সালাম দিলেন, যেমন তিনি সালাম দিতেন। (মুসলিম)

৫. আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের একদল মহিলার নিকট দিয়ে পার হওয়ার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন। (আবু দাউদ)

(প্রকাশ থাকে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাতের ইশারায় মহিলাদেরকে সালাম দেয়ার তিরমিযীর হাদিসটি সহিহ নয়।)

৬. আবু উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী মানুষ সেই, যে প্রথম সালাম করে।’ (আবু দাউদ সহীহ সনদ যোগে, তিরমিযীও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ও বলেছেন হাদীসটি হাসান)

৭. আবু জুরাই হুজাইমী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট হাজির হয়ে বললাম, ‘আলাইকাস সালাম’ ইয়া রাসুলুল্লাহ। তিনি বললেন, ‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। কেননা, ‘আলাইকাস সালাম’ হচ্ছে মৃত ব্যক্তিদেরকে জানানো অভিবাদন বাক্য।’ (আবু দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares