শিরোনাম:
চন্দ্রগঞ্জ বাজার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা মাঈন উদ্দিন হামীম স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ চন্দ্রগঞ্জ আইডিয়াল একাডেমিতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সুমাইয়া মেমোরিয়াল স্মৃতি বৃত্তি প্রদান লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো শাহআলম চৌধুরী স্মৃতি বৃত্তি পরীক্ষা চন্দ্রগঞ্জে মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত আলোচনায় ফজলুর রহমান বাবু ও বীনা আক্তারের “তুমি আমার মনের মানুষ” বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব তোফায়েল আহম্মদের মৃত্যুতে সৌদি প্রবাসী বিএনপির দোয়া ও আলোচনা সভা লক্ষ্মীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহম্মদ পাঠাগার উদ্ধোধন বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহম্মেদের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া জিয়া সৈনিকদলের পূর্নাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

প্রাথমিকে ৭০ হাজার ‘রিজার্ভ টিসার’ নিয়োগ হচ্ছে

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
  • 202 Time View

প্রতিদিনের খবর ডেস্ক :

সাগরকন্যা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষক সংকটে ধুকছে। পাঁচজন শিক্ষক পদের স্কুলটিতে বর্তমানে প্রধানশিক্ষকসহ দুইজন কর্মরত আছেন। প্রধান শিক্ষকও সমম্প্রতি ১৪ দিনের প্রশিক্ষণে ছিলেন। তাকে (প্রধান শিক্ষক) বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, দাফতরিক নানা কাজে বেশিরভাগ সময়ে স্কুলের বাইরে থাকতে হয়। ফলে একজন সহকারী শিক্ষককে প্রায় দেড়শত শিক্ষার্থীর এই স্কুলটি সামলাতে হচ্ছে। তিনি একই সঙ্গে কিভাবে একাধিক শ্রেণির ক্লাস নেন?- সে প্রশ্ন অভিভাবকদের।
এ চিত্র শুধু দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়; একই চিত্র সারা দেশের প্রায় শতভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। নিয়মিত শিক্ষক সংকট ছাড়াও কর্মরত শিক্ষকরা নানা ছুটিতে থাকায় পাঠদান মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের ২০ শতাংশ তথা প্রায় ৭০ হাজার ‘রিজার্ভ টিচার’ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার ।
বিষয়টি স্বীকার করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন আজকালের খবরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে যারা প্রাথমি স্তরের শিক্ষার্থী তাদেরকে গুনগত শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে এটা অর্জন করা সম্ভব হবে না। প্রশিক্ষণ ছাড়াও শিক্ষকরা নানা ধরনের ছুটিতে থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট থাকে। পাঠদান নিশ্চিত করতে আপদকালীন ২০ শতাংশ রিজার্ভ টিসার নিয়োগ দেওয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১০শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ দিতে চেয়েছিলাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব পাঠাতে বলেছে। পিইিডিপি-৪ (চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি) কনসালটেন্টকে প্রস্তাবনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ এ প্রকল্পের মাধ্যমেই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি-২০১৮ এর তথ্যানুযায়ী সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে পুরাতন ৩৮ হাজার ৯১৬টি ও নতুন জাতীয়করণকৃত স্কুল ২৬ হাজার ৬১৩টি। এসব স্কুলে শিক্ষক রয়েছে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৭জন। এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক এক লাখ ২৫ হাজার ৫৭ জন ও  নারী শিক্ষক দুই লাখ ২৩ হাজার ৮১০ জন। পুরতান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতকরা ৬৮ দশমিক ০২ ভাগ নারী শিক্ষক ও নতুন সরকারি স্কুলে এ হার ৫৬ দশমিক শুন্য চার ভাগ।
সরকার অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা, উপবৃত্তিসহ নানা কর্মসূচি  নেওয়ার ফলে প্রায় শতভাগ শিশুই বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ঝড়ে পড়ার হার ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হচ্ছেনা।
ইউনেস্কোর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল ব্যুরো ফর এডুকেশন’র এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকের অভাবেই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ শতাংশ শিক্ষক স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। প্রতিদিন ১৩ শতাংশ শিক্ষকের অনুপস্থিত বলে দিচ্ছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ব্যাংকের ‘লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ-২০১৮’ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অর্থাৎ শিশুদের ১১ বছর বয়স পর্যন্ত যা শিখানো হয় তা অন্যান্য দেশের শিশুরা সাড়ে ছয় বছরে শিখছে। বাংলাদেশের ৫ম শ্রেণির ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই পাঠ্যবইয়ের অংক বোঝে না। ৩য় শ্রেণির ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা বই পড়তে পারে না। এ সমস্যা সমাধানে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষকদের মান বাড়াতে প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, নতুন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পর বাধ্যতামূলক দেড় বছরের ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (ডিপিএড) প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এছাড়া শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ (টিওটি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), চাহিদাভিত্তিক সাব-ক্লাস্টারসহ আরও স্বল্প মেয়াদী অনেক প্রশিক্ষণ নিতে হয়। পেশাগত দক্ষতা অর্জনে অনেক শিক্ষক বিএড, এমএডসহ নানা ধরণের কোর্স করেন। বর্তমানে পিইিডিপি-৪ এর মাধ্যমে শিক্ষকদের বিদেশে মাস্টাস কোর্স করানো হচ্ছে। ৬৮ ভাগ নারী শিক্ষক হওয়ায় তাদের অনেকে ছয়মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকেন। অন্যান্য শিক্ষকরা বিভিন্ন ছুটি ভোগ করেন। বছরে গড়ে ২৭০ দিন স্কুল খোলা থাকে। শিক্ষকের অভাবে এই সময়ের মধ্যে কোর্স শেষ করা যায় না। শিক্ষক সংকটই দেশের প্রাথমিক শিক্ষার দুর্বলতার প্রধান কারণ।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,  যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে নতুন নিয়োগ নীতিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতা ¯œাতক করা হয়েছে। এছাড়া শিশু শিক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞান ভীতিদূর করতে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ শতাংশ কোঠা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিয়মিত শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে পাঠদানের জন্য ২০ শতাংশ ‘রিজার্ভ টিসার’ নিয়োগের সিদ্বান্ত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক সংকট থাকবে না।
এর আগে এ ধরণের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ১১ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০১২ সালের ১২ আগস্ট ২৭ হাজার ৭শ’ ২০ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭০১ জনকে জনকে নিয়োগ দেয় সরকার। বাকিদের ‘পুল শিক্ষক’ হিসেবে সাত দিন থেকে ছয় মাসের জন্য কোটার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয় (পুল শিক্ষকরা প্রতিমাসে ছয় হাজার টাকা সম্মানী পান, তাদের কোনো ছুটি নেই এবং তাদের নিয়োগ সাময়িক)। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে নতুন করে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন পুল শিক্ষকরা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাদের চাকরি নিয়মিত করতে বাধ্য হয় সরকার।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘রিজার্ভ টিসার’দের খস্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে ন্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া উচিত। নিয়োগে যাবতীয় শর্ত উল্লেখ করে দিতে হবে। মাসিক বেতনের পরিবর্তে ধোক বরাদ্ধ দিতে হবে। না হলে ফের উদ্যোগটি বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কলাপাড়া উপজেলার দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) ইকবাল বাশার মুঠোফোনে আজকালের খবরকে বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে দুই জন শিক্ষককে অন্যত্র প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গেছেন। বর্তমানে আমিসহ দুইজন কর্মরত। একাধিকবার টিও এবং এটিওকে বলার পরেও শিক্ষক দেয়নি। খুবই ভোগান্তিতে রয়েছি। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অফিসের কাজ সামাল দেওয়ার পরে ক্লাস নেওয়ার সময় পাই না। কয়েক দিন আগে ১৪ দিনের লিডারশীপ প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তখন একজন শিক্ষককে স্কুল সামলাতে হয়েছে। একজন শিক্ষক দিয়ে কোনভাবে একটি স্কুলের সব ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনারে অংশ নিতে হয়। চলতি বছর সারা দেশের স্কুলে সময়বদ্ধ পাঠদান সূচি (একই দিন একই বিষয় পড়ানো ) অনুযায়ী পড়ানো হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে এটি বাস্তবায়ন কঠিন। দ্রæত এ সংকট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সুত্র : আজকালের খবর

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares