প্রতিদিনের খবর ডেস্ক:
বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরিফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যার সময় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি পাশেই ছিলেন। তিনি খালি হাতেই খুনিদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। মিন্নি অসহায় কণ্ঠে বলছিলেন, ‘অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু ফিরাইতে পারি নাই।’
বুধবার সকালের ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে দেখা যায়, রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি অনেক চেষ্টা করেও তাঁর স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি।
সেই নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কলেজ দিয়ে বের হইছি, ও (রিফাত) আমার সাথে ছিল। তখন কিছু পোলাপান আইসা কী জানি বলা শুরু করছে, ‘গালি দিছো ক্যান, গালি দিছো ক্যান?’ এ রকম জানি কী…। পরে আরো দু-তিনটা ছেলে আইসা কোপান শুরু করছে। আমি অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু ফিরাইতে পারি নাই।”
আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আরো বলেন, ‘দিনদুপুরে যারা এমন করে, আমি তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই। তাদের যেন শাস্তি হয়।’
এদিকে বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তৎপর আছে। সম্ভাব্য সব জায়গায় পুলিশ ফোর্স নিয়োগ করে রাখা হয়েছে এবং পুলিশের টিম রয়েছে। আমি আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ইনশাআল্লাহ আমরা অধিকাংশ আসামিকে ধরতে সক্ষম হবো। এটি জঘন্য নারকীয় ক্রিমিনাল অফেন্স, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে এ ঘটনায় নিহত রিফাত শরিফের বাবা দুলাল শরিফ বাদী হয়ে একটি মামলা করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এসপি মারুফ হোসেন বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ সকালে চন্দন নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি এ মামলার ৪ নম্বর আসামি।’
বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে গতকাল সকালে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে তাঁর স্বামী নেয়াজ রিফাত শরিফকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নববধূ ও এক যুবক বাধা দিয়ে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
হামলার পর শরিফকে গুরুতর আহতাবস্থায় প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিক তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভর্তির এক ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শরিফের মৃত্যু হয়।
শরিফকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সন্ত্রাসী দুই যুবক ধারালো দা দিয়ে একের পর এক কোপাতে থাকে শরিফকে। এ সময় শরিফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই সন্ত্রাসীকে বারবার প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এ ঘটনাটি পুলিশের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় ছিল। নিহত রিফাত শরিফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল হালিম দুলাল শরিফ। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রিফাত।
ভিডিওচিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, ভিডিওচিত্রে যে দুই সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে জখম করতে দেখা গেছে, তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং অন্যজন রিফাত ফরাজী। তারা উভয়েই স্থানীয়ভাবে ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব ঘটনায় একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে বলে বরগুনা থানা সূত্রে জানা গেছে।
সুত্র: আজকালের খবর
Leave a Reply