বিশেষ প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে পরিকল্পিত মামলায় প্রতিপক্ষ সৎভাই পরিবারের সদস্যদের ফাঁসাতে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে হামলা ও মামলার শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগিরা। উপজেলার মধ্য ভাদুর গ্রামের আরেকমিয়া পাটোয়ারী বাড়ির মরহুম মুনছুর আহম্মদ পাটোয়ারীর দুই পরিবারের ঔরসজাত সন্তানদের মধ্যে এ বিরোধ সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, ভাদুর গ্রামের আরেকমিয়া পাটোয়ারী বাড়ির মুনছুর আহম্মদ পাটোয়ারী জীবদ্দশায় প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর সামছুন্নাহারকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। প্রথমপক্ষ পরিবারে ৪ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তান রয়েছে এবং দ্বিতীয়পক্ষ পরিবারে স্ত্রীসহ ২ পুত্র ও ৫ কন্যা রেখে মুনছুর আহম্মদ পাটোয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে মুনছুর আহম্মদ ২৯৮ শতাংশ জমিজমা রেখে যান। ওই সম্পত্তি দ্বিতীয় স্ত্রী, ৬ ছেলে ও ৯ মেয়ের মধ্যে ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী পরিমাপ করে ভাগবাটোয়ারা করে দেন সালিশদারগণসহ এলাকার গণ্যমান্যরা।
এ দিকে দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলেরা বিদেশ থাকার সুযোগে প্রথম স্ত্রীর ছেলে তাজুল ইসলাম মোহনগংরা সৎভাই মিজানুর রহমান গংদের জমিজমা জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। এরই মধ্যে মিজানুর রহমান গংরা তাদের ওয়ারিশী সম্পত্তির চাষাবাদকৃত জমি একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দেলুর কাছে বর্গা দেন। এর কিছুদিন পর দ্বিতীয় স্ত্রী সামছুন্নাহার মৃত্যুবরণ করলে তার ছেলে, মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজনরা মরদেহ দাপন সম্পন্ন করেন। এর দুইদিন পর ওই শোকাহত পরিবারের দুর্বলতার সুযোগে ফয়সাল হোসেন, আরিফ হোসেন, জাহিদ হোসেন ও ওসমান গণিসহ অন্যান্যরা মিলে বর্গাচাষী দেলোয়ার হোসেন তার আবাদকৃত ধান কাটতে গেলে তারা বাধা দেয়। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে আরিফ হোসেন পাশে থাকা তালগাছের ঢালে পড়ে গেলে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে এ ঘটনাকে পুঁজি করে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় ফয়সাল হোসেন বাদী হয়ে চলতি বছরের ২ মে তারিখে রামগঞ্জ থানায় শোকাহত পরিবার ও বর্গাচাষীসহ ১০জনকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১নং আসামি এমরান হোসেনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। তবে এই মামলার কয়েক আসামি জামিনে ছাড়া পায় এবং অন্যান্যরা পলাতক অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ভূক্তভোগি পরিবারের সদস্য জাকির হোসেন সবুজ জানান, আমি মরহুম মুনছুর আহম্মদের দ্বিতীয় সংসারের মেয়ের জামাতা। আমার শ্বাশুড়ি মারা গেলে ওইদিন আমার স্ত্রীসহ ওই বাড়িতে যাই। ঘটনার দিন ধানকাটা নিয়ে শোর-চিৎকার শুনে আমি এগিয়ে যাই। এসময় দেখা যায়- ফয়সাল হোসেন, আরিফ হোসেন, জাহিদ হোসেন ও ওসমান গণিসহ সংঘবদ্ধ অন্যান্যরা বর্গাচাষী দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করছে। পরে এলাকাবাসীসহ আমরা এগিয়ে আসলে পালিয়ে যাওয়ার সময় আরিফ হোসেন তালগাছের সাথে স্বজোরে আঘাতপ্রাপ্ত হয় বলে লোকমুখে শুনেছি। ওই ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে আমার শ্বাশুড়ি ও তার ছেলে মেয়েদের সম্পত্তি জবরদখল, রামগঞ্জের সোনাপুর বাজারের দোকানঘর ও বাড়ির দক্ষিণপাশে জমি বাউন্ডারী ওয়াল করে দখল করে রেখেছে। এসব জায়গাজমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরধরে আমাদের নারী-পুরুষ ১০জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। উক্ত মামলায় আমার শ্যালক এমরান হোসেন কারাগারে রয়েছেন এবং আমরা পলাতক অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছি। এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি আমরা।
ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, আরেকমিয়া পাটোয়ারী বাড়ির মরহুম মুনছুর আহম্মদ পাটোয়ারীর দুই সংসার। কিন্তু প্রথম সংসারের ছেলেরা দ্বিতীয় সংসারের ছেলে মেয়েদের জমিজমা এবং রামগঞ্জের সোনাপুর বাজারের একটি দোকানের ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিচ্ছে না। এটা নিয়ে আমার পরিষদে বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক হওয়ার পরও বিরোধের মিমাংসা হয়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) মোহসেন চৌধুরী বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন অবস্থায় আছে। ডাক্তারী রিপোর্ট হাতে ফেলে এই মামলার চার্জসীট আদালতে দাখিল করা হবে। তবে মামলার বাদী ও বিবাদীদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
Leave a Reply