প্রতিদিনের খবর ডেস্ক :
বাংলাদেশে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে শুঁটকি ও গরুর মাংসে। সম্প্রতি চিকিৎসকদের করা একটি গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ক্যান্সারের জন্য খাদ্যাভ্যাসকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, মানুষের মধ্যে শুঁটকি ও গরুর মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেশি।
শুঁটকিতে নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় শুঁটকি ভালো রাখার জন্য এর সঙ্গে ডিডিটি (ডাইক্লোরোডাইফিনাইলট্রাইক্লোরোইথেন) মেশানো হয়। ডিডিটি পাউডার ও রাসায়নিক স্প্রে মিশ্রিত শুঁটকি খেলে লিভার, পাকস্থলীসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়।
আর গরুর মাংস বিক্রেতারা মাংস তাজা দেখানোর জন্য নানা ধরণের কৌশল নিচ্ছেন। মেশাচ্ছেন ভেজাল। মাংস তাজা দেখানোর জন্য বোতলে তুলে রাখা হয় রক্ত। সেই রক্ত পরে মাংসে প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্যান্সার রোগীর হার কেমন ও তারা কী ধরনের ক্যান্সারে বেশি ভুগছে তা জানতে নিয়মিত গবেষণা করে আসছে চিটাগং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন সার্জারি (সিআরআইসিএস) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধীন ল্যাবরেটরি অব ইউক্যারিওটিক জিন এক্সপ্রেশন অ্যান্ড ফাংশন। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৫ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৬০০ রোগীর ওপর একটি গবেষণা চালায় তারা।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ক্যান্সারে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে কক্সবাজারে, যা চট্টগ্রাম অঞ্চলের মোট রোগীর ৩১ শতাংশ। এরপর ১৫ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর, ১৫ শতাংশ সাতকানিয়ার এবং ১৩ শতাংশ পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া ও বালুখালীর। কক্সবাজারের ক্যান্সার রোগীদের ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ ভুগছে লিম্ফোমায়। এছাড়া পাকস্থলীর ক্যান্সারে ভুগছে ১১ দশমিক ৮৩ ও শ্বাসতন্ত্রের ১১ দশমিক ৮৩ শতাগবেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামের মতো সারাদেশের চিত্রও একই হতে পারে। শুঁটকি ও গরুর মাংস যারা খাদ্যাভ্যাসে রাখছেন তারা এ মরণব্যাধীতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
২০১৬ সালের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালেও একই গবেষণা করেছে প্রতিষ্ঠান দুটি। চিত্রও পাওয়া গেছে একই। অর্থাৎ ২০১৬ সালের মতোই সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার রোগীদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। একে উদ্বেগজনক বলছেন গবেষকরগবেষণা দলের প্রধান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বানু বলেন, চমেক হাসপাতালে প্রতি বছরই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে চমেক হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীর বিস্তারিত তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতি বছর প্রতিবেদন তৈরি করি। আমাদের পর্যবেক্ষণে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বেশি পাওয়া গেছে।
এসব এলাকার মানুষের খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে শুঁটকি এজন্য দায়ী বলে আমরা ধারণা করছি। তবে এ বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
Leave a Reply