প্রতিদিনের খবর ডেস্ক:
“মা কথাটি ছোট্ট অতি/ কিন্তু জেনো ভাই/ ইহার চেয়ে নাম যে মধুর/ ত্রি-ভূবনে নাই।”- কবি একরত্তিও মিথ্যা বলেননি। ত্রি-ভূবনের সবচেয়ে মধুরতম শব্দ কনিকা ‘মা’। সন্তানের বিশুদ্ধতম ¯েœহ-ভালোবাসার আঁকড় ‘মা’। চোখ বন্ধ করে যার উপর আস্থা রাখা যায়, তিনি হলেন ‘মা’। সন্তানের শতবিপদেও তিনি পাশে থাকেন অবিচল, তিনি হলেন ‘মা’। মায়ের ভালোবাসাই কেবল এ জগতে নিকষিত হেমের মত নিখাদ অকৃত্রিম, বুক ঝিম করা প্রতিদানহীন। কোনো উপমা, উপ্রেক্ষা, সংজ্ঞায় মায়ের ভালোবাসার পরিধি আকার, আয়তন ও গভীরতাকে ছুঁতে পারেনি। তুলনারহিত এক ব্যক্তিস্বত্ত্বা ‘মা’।
মা উচ্চারণের সাথে সাথে হৃদয়ের অতল গহীনে যে আবেগ ও অনুভূতি রচিত হয়, তাতে অনাবিল সুখের আবেশ নেমে আসে। প্রতিক্ষণ-প্রতিদিন নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সন্তানদের পৃথিবীতে চলার যোগ্য তৈরি করে দেন যিনি, সেই পরম শ্রদ্ধেয় ‘মা’ কে বছরে একটি দিন বিশেষভাবে মাতৃভক্তরা পালন করেন। মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে আজ বিশ্ব মা দিবস।
বলা হয়ে থাকে জগতমাঝে গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক পথ থাকতে পারে। কিন্তু অদৃশ্যজগত থেকে একজন মানব সন্তানকে এ দুনিয়ায় আগমনের একটাই পথ, আর সেটাই হলেন ‘মা’। কোন মানব সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন মা যে পরিমাণ কষ্ট সহ্য করেন, তা পৃথিবীর কোন ভাষাতেই বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কবি কামিনী রায় তার ‘কত ভালবাসি মা’ কবিতায় মাকে বন্দনা করে লিখেছেন- “জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-/ মা, তোমারে কত ভালোবাসি!/ ‘কত ভালোবাস ধন?’/ জননী শুধায়।/ এ-ত বলি দুই হাত প্রসারিত দেখায়।/ তুমি মা আমারে ভালোবাস কতখানি?/ মা বলেন ‘মাপ তার আমি নাহি জানি।’/ ‘তবু কতখানি, বল।’/ ‘যতখানি ধরে/ তোমার মায়ের বুকে।’
কিন্তু দুঃখজনক ও লজ্জাজনকভাবে কোন কোন মায়ের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে! আবার কখনো কখনো মায়ের ডাইনী চরিত্রও ফুটে উঠে। যদিও এটা মায়ের শ্বাশ্বত বৈশিষ্ট্য নয়, ব্যতিক্রম। মুক্ত অভিধান ‘উইকিপিডিয়া’ মা দিবসের দুইটি ইতিহাস তুলে ধরেছে। একটি ইতিহাসে বলা হয় ‘মা দিবসের’ প্রচলন শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসে। অপর ইতিহাস হলো-সর্ব প্রথম ১৯১১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আমেরিকাজুড়ে ‘মাদারিং সানডে’ নামে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করা হয়। ১৯১৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। ওই বছর ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর পৃথিবীর দেশে দেশে মা দিবসটি পালনের রেওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে। যদিও করোনার কারণে এবার দিবসটিতে কোন আনুষ্ঠানিকতা দেখা যাবেনা। পৃথিবীর সব দেশেই মা শব্দটিই কেবল সর্বজনীন। মা প্রথম কথা বলা শেখান বলেই মায়ের ভাষা হয় মাতৃভাষা। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। মায়ের দেহে নিউট্রোপেট্রিক রাসায়নিক পদার্থ থাকায় মায়ের মনের মাঝে সন্তানের জন্য মমতা জন্ম নেয়, মায়ের ভালোবাসার ক্ষমতা বিজ্ঞানের মাপকাঠিতে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। ইসলামে মায়ের মর্যাদা অতি উচ্চে। হযরত বায়েজীদ বোস্তামীর (রা.) মাতৃভক্তি আজও মানুষের মুখে মুখে গল্প হয়ে ফেরে। হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান অনেক উঁচুতে। তবে মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর নির্দিষ্ট কোনো দিন নেই। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি মুহূর্তের। সব ধর্মে মায়ের মর্যাদা সৃষ্টিকর্তার পরেই।
Leave a Reply