পঞ্চম শ্রেণিসহ প্রাথমিক পর্যায়ের অন্যান্য শ্রেণির বাড়ির কাজও (ওয়ার্কশিট) চলবে। গতকাল থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ক্লাসের সময়সূচি প্রণয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। এই নির্দেশনার মাধ্যমে কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে, তার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা পেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। গতকাল দুপুরের দিকে মাউশি এই নির্দেশনা দেয়। এরপর
নির্দেশনা অনুযায়ী ক্লাসের সময়সূচি ঠিক করার কাজ শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। প্রায় দেড় বছর পর আগামী রোববার থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর ক্লাস শুরু হবে। শিক্ষাবিদেরা মনে করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য তাঁরা ঘাটতি পূরণের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে বলছেন।
ক্লাসের সময়সূচি সাজাতে ১১ দফা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হয় ৫ সেপ্টেম্বর। যদিও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সময়সূচি নির্ধারণসহ অন্যান্য কাজ করতে পারছিল না। এ অবস্থায় গতকাল মাউশি ১১ দফা নির্দেশনা দেয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের আগের মতো দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকতে হবে না। করোনাকালের আগে মাধ্যমিক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে ছয় ঘণ্টার মতো স্কুলে থাকতে হতো। সরকারের কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) মোকাবিলাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি পরামর্শ দিয়েছিল যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিকে শিক্ষার্থীদের কম সময় স্কুলে রাখতে হবে, যাতে স্কুলে খেতে না হয়, মাস্ক খোলার প্রয়োজন না হয়।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। আর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন ক্লাসে যেতে হবে। সময়সূচির সঙ্গে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবহারিক ক্লাসগুলোও নির্ধারণ করা যেতে পারে।
সময়সূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে মাউশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ, প্রস্থান বা অবস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে বলেছে। তারা বলছে, সময়সূচি এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে, যেন বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে ও বের হয়। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপাতত প্রাতঃসমাবেশ (অ্যাসেম্বলি) বন্ধ থাকবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাসের সময়সূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয় মেনে চলতে হবে।
সময়সূচি ঠিক করছে স্কুলগুলো
মাউশির নির্দেশনার পর গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হলে রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহানা বেগম বলেন, তাঁরা মাউশির নির্দেশনার আলোকে সময়সূচি প্রণয়নের কাজ করছেন। এ নিয়ে তাঁরা গতকাল বৈঠকও করেছেন। শিগগির তা চূড়ান্ত করা হবে।
এই নির্দেশনার আলোকে আজ বৃহস্পতিবার ক্লাসের সময়সূচি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর গবর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ ভূঁইয়া।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গতকাল বিকেল পর্যন্ত সময়সূচি প্রণয়নে কোনো নির্দেশনা দিতে পারেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক গতকাল বলেন, সময়সূচির বিষয়ে তাঁরা সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পাননি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার (আজ) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছে।
জেএসসি নিয়ে সংশয়
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা হয়। কিন্তু মাউশির নির্দেশনায় অষ্টম শ্রেণিতেও সপ্তাহে এক দিন করে ক্লাস রাখায় শিক্ষা–সংশ্লিষ্ট অনেকেই ভাবছেন গত বছরের মতো এবারও জেএসসি পরীক্ষা না–ও হতে পারে। গতকাল ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গেলে এ নিয়ে কথা হয় বোর্ডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, জেএসসি পরীক্ষা হয় নভেম্বর মাসে। পরীক্ষা নিতে হলে পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস (সংক্ষিপ্ত) করা দরকার, যা এখনো হয়নি। এ ছাড়া পরীক্ষার ফরম পূরণ এবং প্রশ্নপত্র তৈরি ও ছাপানোরও কোনো প্রস্তুতি নেই।
আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথম দিকে এইচএসসি পরীক্ষা হবে জানিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ রকম অবস্থায় জেএসসি পরীক্ষা নেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে তাঁরাও সন্দিহান। তাঁর মতে, এই পরীক্ষা নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়টি এখনই জানিয়ে দেওয়া দরকার।
‘শুরুতেই পড়াশোনার চাপ নয়’
শিক্ষার্থীরা দেড় বছর পরে শ্রেণিকক্ষের ক্লাসে ফিরছে। অনেকের মধ্যে করোনা নিয়ে আতঙ্ক থাকতে পারে। অনেকের মধ্যে ক্লাসে ফেরা নিয়ে সংকোচ তৈরি হতে পারে। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, শিশুদের আগে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরপরই লেখাপড়া নিয়ে বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। তাতে ঝরে পড়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, সেটি আরও বাড়বে। তাই নমনীয় হয়ে আনন্দময় পরিবেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শেখায় যে ঘাটতি হয়েছে, তা পূরণে বিদ্যমান শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরে শেষ না করে আরও দু-এক মাস বাড়ানো যেতে পারে।
আজকালের খবর
Leave a Reply