শিরোনাম:
পাঁচপাড়া আদর্শ সমাজ কল্যাণ পাঠাগার মিনিবার ফুটবল টুর্ণামেন্টের উদ্বোধন হানিফ মিয়াজীর বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন চন্দ্রগঞ্জে নিরাপদ সড়ক চাই উপলক্ষে বণার্ঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভা চন্দ্রগঞ্জে “শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের” নতুন কার্যালয় উদ্বোধন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের মতবিনিময় সভা লক্ষ্মীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত -৩, আহত ২০জন কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যাল কলেজ সভাপতির আগমন উপলক্ষে আনন্দ মিছিল লক্ষ্মীপুরের পাঁচপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত অপরাধ কমাতে সিসিটিভি ক‍্যামেরার ভূমিকা চন্দ্রগঞ্জ দলিল লেখক কল্যান সমিতির সভাপতি কাউছার, সম্পাদক মহিন

মহামারীর দিনে অন্যরকম স্কুলে ফেরা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
  • 381 Time View
প্রতিদিনের খবর ডেস্ক :
আগে কখনও এমন হয়নি, স্কুলের ঢোকার সময় এভাবে কখনও চকলেট বা ফুল দেয়নি; কপালে যন্ত্র তাক করে এভাবে কখনও তাপমাত্রাও মাপেনি।  বাচ্চাদের কাছে স্কুল মানে খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, হুল্লোড়, একসঙ্গে টিফিন শেয়ার করা, আরও অনেক কিছু। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারীতে ঘরবন্দি ৫৪৩ দিন পার করে যেভাবে তারা স্কুল ফিরল, সে অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা।
আর যারা এবারই প্রথম স্কুলে যাচ্ছে? তাদের শৈশবের আনন্দের কত কিছুই না কেড়ে নিচ্ছে এই মহামারী। স্কুল বন্ধ হয়েছিল সেই গতবছরের মার্চে। এরপর অনলাইনে ক্লাস হয়েছে, কিন্তু স্কুলে যাওয়া আর সেভাবে হয়নি।
এর মধ্যে অনেকের স্কুল ড্রেস বা জুতো ছোট হয়ে গেছে, কারও বা ব্যাগ নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার স্কুল খোলার তারিখ ঘোষণার পর গত কয়েক দিন তাই শিক্ষার্থীদের কেটেছে প্রস্তুতি আর ক্লাসে ফেরার উত্তেজনার মধ্যে।
এখন স্কুলের ইউনিফর্মের সঙ্গে যোগ হয়েছে মাস্ক। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মা হাতে দিয়েছেন স্যানিটাইজারের ছোট্ট বোতল।
মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের গেইট সাজানো হয়েছে বেলুন দিয়েঅ গেইটের পাশেই একটি বোর্ডে লেখা আছে মহামারীর মধ্যে কী কী নিয়ম মানতে হবে বাচ্চাদের।
স্কুলের গেইটে দুই পাশে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষক আর কর্মচারীরা। অভিভাবকরা বাচ্চাদের পৌঁছে দিয়ে গেলেন গেইটে। সেখানে তাদের তাপমাত্রা মাপা হল, সোমনে ধরা হল চকলেটের ডালা।
মহামারীর মধ্যে ঝুঁকি কমাতে সব ক্লাসের বাচ্চাদের একসঙ্গে স্কুলে ফেরানো হয়নি। আপাতত একেক ক্লাস একে দিন স্কুলে যাবে। তাই শ্রেণিকক্ষের চেহারাও এখন অন্য রকম।
কোনো কোনো ক্লাস সাজানো হয়েছে ছবি দিয়ে। দূরত্বের নিয়ম মানতে শিশুদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে বেশ খানিকটা ফাঁক রেখে।
মিরপুর গার্লস আইডিয়ালে আগে যে বেঞ্চে দুজন বসত, এখন সেখানে একজন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবার মুখে মাস্ক। কারও কারও ডেস্কের সামনে স্যানিটাইজারের শিশি।
কর্তৃপক্ষ বলে দিয়েছে, এই ভাইরাসের দিনে আপাতত স্কুলে ব্যাগ নেওয়া যাবে না, টিফিন খাওয়া যাবে না। স্কুলে ঢোকা থেকে শুরু করে বের হওয়া পর্যন্ত অনেক নিয়ম কানুন মানতে হবে। তবে তারপরও অনেক স্কুলশিশুর সঙ্গেই ব্যাগ দেখা গেছে।
ঢাকার উদয়ন স্কুলে ঢোকার সময় বাচ্চাদের দেওয়া হয়েছে একটা করে লাল গোলাপ। স্কুলের গেইটে দেখা গেল অনেকের এক হাতে গোলাপ, অন্য হাতে স্যানিটাইজারের শিশি। মাস্কে ঢাকা মুখে হাসি বোঝার উপায় নেই, তবে চোখের তারায় উপচে পড়া আনন্দ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি ‘অনুকূলে’ না আসায় দফায় দফায় ছুটি বাড়িয়ে আসছিল সরকার।
স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে সরকারের উপর নানা মহল থেকে চাপও বাড়ছিল। এরমধ্যে সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা নিম্নমুখী হলে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব দ্রুত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
এরপরই গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
১২ সেপ্টেম্বর থেকে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থী, পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির প্রতিদিন এবং প্রথম থেকে চতুর্থ ও ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে সপ্তাহে একদিন ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনাও জানান তিনি।
তবে কেউ অসুস্থ থাকলে তাকে প্রতিষ্ঠানে না পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিটি স্কুল নজরদারি করা হবে এবং সংক্রমণ বাড়ার কারণ আছে মনে হলে প্রয়োজনে তা বন্ধ করা হবে।”
চলতি বছরের শেষভাগে এসএসসি ও এইচএসসির পাশাপাশি পঞ্চমের প্রাথমিক সমাপনী, অষ্টমের জেএসসি-জেডিস এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
স্বস্তির সঙ্গে উদ্বেগও আছে অভিভাবকদের
মহামারীকালে দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষ থেকে দূরে থাকলেও অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে এসেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে অনেক শিক্ষার্থীই এর বাইরে থাকায় সশরীরে ক্লাস নেওয়ার দাবি ছিল।
ফলে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্তে অনেক অভিভাবকই স্বস্তিবোধ করছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে তাদের। সন্তানের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তায় থাকা কিছু অভিভাবক সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামার আগে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে ঝুঁকির মুখে ফেলতে চান না।
ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হোসনে আরা বলেন, “স্কুল-কলেজ খোলায় বাচ্চারা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবে। ক্লাসমেট, টিচারদের সাথে দেখা হবে। ওরাও একটা মানসিক প্রশান্তি পাবে।
“তবে স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মানাটা খুব জরুরি। এই দিকটায় যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সচেতন হয়।”
কোভিড সুরক্ষায় নির্দেশনা
মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছে সরকারও। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এজন্য ১৯ দফা নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে।
তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা, ভিড় এড়াতে প্রতিষ্ঠানের সব প্রবেশমুখ ব্যবহার করা, একটি প্রবেশমুখ থাকলে একাধিক প্রবেশমুখের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখা, প্রতিষ্ঠানের সব কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ, আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করার নির্দেশনা রয়েছে।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে তাদের বসার ক্ষেত্রে তিন ফুট দুরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে, কোথাও যেন পানি না জমে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতেও বলেছে শিক্ষা অধিদপ্তর।
স্কুল-কলেজ খোলার পর শুরুতে দিনে দুটি করে ক্লাস রেখে রুটিন তৈরি করতে বলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ওইসব স্তরের জন্য নির্ধারিত ক্লাসগুলো সমন্বয় করে রুটিন তৈরি করতে হবে।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চলমান ডিগ্রি, সম্মান ও মাস্টার্স পরীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় করে ২০২১ ও ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য রুটিন তৈরি করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে, যেন ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ, প্রস্থান ও অবস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মতো কোনো বিষয় যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে রুটিন তৈরি করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপাতত অ্যাসেম্বলি বা সমাবেশ বন্ধ থাকবে এবং প্রতিদিন নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুযায়ী তথ্য পাঠাতে হবে।
আজকালের খবর

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shares