প্রতিদিনের খবর ডেস্ক :
দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। এ মাসে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। বরকতের এ মাসকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা চাই। কী ধরনের প্রস্তুতি নেবেন সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা হলো।
মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ
রমজান মাসের প্রস্তুতিস্বরূপ শাবান মাস থেকেই নফল রোজা রাখা। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) রমজান মাসের রোজা ছাড়া অন্য কোনো মাসের রোজা এত অধিক গুরুত্বসহকারে পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক পরিমাণে রোজা পালন করতে দেখিনি।’ (বুখারি : ১৮৬৮; মুসলিম : ১১৫৬)। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পূর্বের সুন্নত নামাজ যেমন ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতিস্বরূপ মনকে নামাজের জন্য প্রস্তুত করে এবং উৎসাহিত করে, তেমনি শাবান মাসের রোজা রমজান মাসের রোজা পালনে মন ও শরীরকে প্রস্তুত করে এবং উৎসাহিত করে।
রমজান শুরুর আগে তওবা করা
সামনে যেহেতু একটি বরকতময় মাসের শুভাগমন ঘটতে যাচ্ছে তাই আমাদের জীবনের সব ধরনের গুনাহ থেকে তওবা করতে হবে। পবিত্র মন ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে এই মাসের ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আল্লাহ তায়ালার নিকট তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর : ৩১)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট তওবা কর, আমি তার নিকট দৈনিক ১০০ বার তওবা করি।’ (মুসলিম : ২৭০২)
দোয়া করা
একজন মুসলিম তার রবের কাছে দোয়া করবে যাতে তিনি তাকে রমজান মাস পাওয়ার তাওফিক দান করেন, ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং শারীরিকভাবে সুস্থ রাখেন, সর্বদা যেন তার আনুগত্য করেন এবং তার আমল কবুল করেন। হাদিসে আছে, রজব মাস এলে নবীজি (সা.) আল্লাহর দরবারে দোয়া করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন আর রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের জীবন দান করুন।’
রমজানের আগমনে আনন্দিত হওয়া
রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতগুলোর অন্যতম একটি। কারণ এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। রমজান মাস হলো কুরআনের মাস। এ মাসে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। তাই এ মাসের আগমনে মনে খুশি ও আনন্দ অনুভব করা।
ওয়াজিব রোজার কাজা আদায় করা
বিগত রমজানে অসুস্থতা বা সফরের কারণে কোনো রোজা কাজা হয়ে থাকলে, সেসব আদায় করে নিজেকে মুক্ত করে ফেলা। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু সালামাহ (রা.) বলেন, আমি হযরত আয়েশাকে (রা.) বলতে শুনেছি, ‘আমার ওপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকত, যার কাজা আমি শাবান মাসের পরে আদায় করতে পারতাম না।’ (বুখারি : ১৮৪৯; মুসলিম : ১১৪৬)। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, ‘হজরত আয়েশা (রা.)-এর হাদিস প্রমাণ করে যে, এক রমজানের অনাদায় রোজা পরের রমজান আসা পর্যন্ত বিলম্ব করা জায়েজ নেই। অর্থাৎ এক রমজানের কাজা রোজা পরবর্তী রমজান আসার পূর্বেই আদায় করতে হবে।’ (ফতহুল বারি : ৪/১৯১)
পর্যাপ্ত ইলম অর্জন করা
রমজান মাসের রোজা পালনের বিধি-বিধান, মাসআলা-মাসায়িল সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করা। যেন সঠিকভাবে রমজানের পূর্ণ হক আদায়ের সঙ্গে আমল করা যায়।
দুনিয়াবি প্রয়োজন থেকে অবসর হওয়া
রমজান হলো ইবাদতের মাস। তাই এ মাসে ইবাদত থেকে বিরত রাখতে পারে এমন সম্ভাব্য কাজ রমজান মাস আসার আগেই দ্রুত শেষ করে নেয়া। যেমন প্রয়োজনীয় বাজার করা, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেয়া ইত্যাদি। যেন রমজানের শুরুর দিন থেকেই পূর্ণ মনোযোগ সহকারে ইবাদতে মশগুল হওয়া যায়। আর রমজান মাসে যদি কোনো কাজ আসে তাহলে সম্ভব হলে সেটা জমিয়ে রেখে রমজানের পর করা। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম যা না করলেই নয়, সেগুলো যথাসময়ে করে যাওয়া।
পরিবারের লোকদের শিক্ষা দেয়া
পরিবারের সদস্যবর্গ যেমন স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে বসা এবং তাদেরকে রোজার হুকুম-আহকাম, বিধি-বিধান, মাসআলা-মাসায়িল শিক্ষা দেওয়া ও স্মরণ করিয়ে দেয়া। রমজান মাসের মর্যাদা, গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ে আলোচনা করা।
বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা
হযরত সালামাহ ইবনে কুহাইল (রা.) বলেন, শাবান মাসকে কারীদের মাস বলা হতো। হযরত আমর ইবনে কাইস (রা.) শাবান মাস শুরু হলে তার দোকান বন্ধ করে কুরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর গ্রহণ করতেন। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি কুরআন পাঠের প্রস্তুতিস্বরূপ এখন থেকেই কুরআন তেলাওয়াত করার অভ্যাস করা।
Leave a Reply